বিআরটিএ জানিয়েছে, অননুমোদিত বাম্পার, এ্যাঙ্গেল চোখালো-ধারালো হুক এবং ড্রাইভার কেবিনের সামনে চেসিসের বর্ধিত অংশ ১৫ এপ্রিলের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। যানবাহনের সঙ্গে যুক্ত করা এসব অবৈধ অংশ অপসারণের জন্য বেঁধে দেয়া এই সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরদিন ১৬ এপ্রিল শুরু করা হবে অভিযান।
বিআরটিএর এই উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। এতে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ গাড়ির বাম্পার ও অ্যাঙ্গেলের বর্ধিতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির মালিকরা গাড়ির বডির সঙ্গে অবৈধভাবে শক্ত লোহার অংশ সংযুক্ত করে আসছেন। একারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ে এবং বাস-ট্রাকের অ্যাঙ্গেলগুলো মানুষের শরীরে বিঁধে গিয়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। প্রায়শই এমনটা ঘটতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান বিআরটিএর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তারা এরই মধ্যে নির্দেশটি মানতে শরু করে দিয়েছেন। ট্রাক কাভার্ড ভ্যান থেকে বাম্পার, অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলা শুরু হয়েছে।
যানবাহনের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্ত এসব বর্ধিত অংশ অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ওঠে। এছাড়া এসব বর্ধিত অংশের আঘাতে দুর্ঘটনার সময় হতাহতের সংখ্যা যে বেড়ে যায় একথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বিআরটিএর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ শরুতে তৎপর হয়নি বলে এখন দেশে লাখ-লাখ বাস-ট্রাকে বাম্পার অ্যাঙ্গেল লাগিয়ে ফেলা হয়েছে। ’
বিআরটিএ বেশ কিছু দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গাড়ির বডি ও চেসিসের বাম্পারের সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত অংশই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) দীঘদিন ধরে দুঘটনার কারণ হিসেবে অননুমোদিত বাম্পার, অ্যাঙ্গেল ও বধিত অংশ যুক্ত করাকে দায়ী করে আসছে।
এ প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বিআরটিএর এমন উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক বলে তারিফ করেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে, গাড়ির পুরাতন চাকা ফেটে নষ্ট হওয়ার পর ‘রিপ্লেস; না করে ‘রাভারিং’ করে চালানো হচ্ছে। এটা যেকোনো সময় ফেটে যেতে পারে। চাকার দিকে তাকালেই দেখা যায়, জোড়াতালি দেয়া এবং রাভারিং করা। চাকা লাগাতে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ব্যয় হয় সেই জায়গায় তারা মাত্র ৩ হাজার টাকায় রাভারিং করে ফেলে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
১৬ এপ্রিল থেকে বিআরটিএ যে অভিযান পরিচালনা করবে তার সঙ্গে এই বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।
সাইফুন নেওয়াজ তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখেছেন, ট্রাক এবং বাসের ক্ষেত্রে অ্যাঙ্গেল এবং বাম্পার লাগানোর প্রবণতা বেশি। আর বাসে অবৈধ অ্যাঙ্গেল যুক্ত করার পাশাপাশি আসনসংখ্যাও বাড়িয়ে ফেলেন মালিকরা। এভাবে আসন বাড়ানোর কারণে চাপাচাপি করে বসতে হয় যাত্রীদের। আর দুর্ঘটনার সময় যাত্রীরা চাপ খেয়ে মরে বেশি। এভাবে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। আর বাসের বড়ির সঙ্গে যুক্ত অ্যাঙ্গেলগুলো মানুষের শরীরে বিদ্ধ হয়।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, মুখোমুখি সংঘর্ষের সময় এই বধিতাংশই গুরুতর বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য বেশি দায়ী। ইঞ্জিন কোম্পানিগুলো যানবাহনের যে স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দেয় বাংলাদেশে তার চেয়ে যানবাহনকে আরো বড় আকার দেয়া হয়। সামনে-পেছনে অতিরিক্ত ও ধারালো অংশ যোগ করা হয়। এটা খুবই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
বিআরটিএসূত্র জানায়, গড়ির মূল ডিজাইনে এসব অংশ থাকে না। তাই এগুলো অবৈধ, বেআইনি ও ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের গাড়ির বডি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও ওয়ার্কশপ থেকে বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়াই এসব সংযোজন করে রাস্তায় গাড়ি নামানো ও চালানো হচ্ছে। এবারই প্রথম এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে বিআরটিএ। এর আগে একদফা নোটিস দেয়া হয়। কিন্তু তাতে খুব একটা সাড়া মেলেনি। এবার তাই নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলো। বিআরটিএ এবার ১৬ এপ্রিল থেকে অমান্যকারীদের আনবে শাস্তির আওতায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এসএ/জেএম