দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিছুই হয়নি বলা চলে। এ কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য বোনাপোল স্থলবন্দর আসলে এক অনুপযোগী বন্দরে পরিনত হতে চলেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের পণ্য লোডিং-আন লোডিং-এর জন্য পর্যাপ্ত ক্রেন নেই এখানে। যে পরিমানে পণ্য আসছে সেগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই বন্দরটিতে। এছাড়াও অসহনীয় যানজটের কারণে সঠিক সময় আমদানিকারকরা সঠিক সময়ে পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুর রহমান সজন বাংলানিউজকে বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর এদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্য্ক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
এই বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দূর করতে হবে জায়গার সংকট। জায়গা সংকটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। অনেক পণ্যের প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনেক গাড়িকে বেনাপোলে প্রবেশের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়।
তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট। যোগ করতে হবে অত্যাধুনিক নতুন ইক্যুইপমেন্ট। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে বন্দটির কর্মচাঞ্চল্য কমতে কমতে এটি খুব শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। রয়েছে ৪০টি শেড/গোডাউন। তবে এই বন্দরে বর্তমানে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে এক থেকে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য। জায়গা সংকটের জন্য অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। সেগুলো রোদবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ভারত থেকে আসা ১ হাজার থেকে ১২’শ পণ্য বোঝাই গাড়ি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে মাত্র ৫-৬শ গাড়ি। এদিকে, প্রতিদিনই প্রায় ৫শ গাড়ি পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে প্রবেশের অবেক্ষায় থাকছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেনাপোলে প্রবেশের জন্য পণ্যবাহী গাড়ি পেট্রোপোলে দাঁড়িয়ে থাকে বলে সঠিক সময় ওই আমদানি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়। কোনো কোনো গাড়ি ১০ দিনও প্রেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে থাকছে। অতিরিক্ত এই টাকা গুনতে হচ্ছে বলেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এর সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা পণ্য এবং মূল্যবান সময়।
বেনাপোল স্থলবন্দরে আসা পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য মাত্র পাঁচটি ক্রেন ও পাঁচটি ফর্কলিফট রয়েছে। তবে এদের মধ্যে একটি সচল থাকলেও বাকি ৪টি প্রায়ই অচল অবস্থায় থাকে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করার জন্য একটি ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। এই বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তারা কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে করে আমাদের মত অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বেনাপোল) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের জায়গা সংকট ও ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এসজেএ/জেএম