ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আইপিইউ সম্মেলন

বর্ণিল আয়োজন প্রস্তত বাংলাদেশ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
বর্ণিল আয়োজন প্রস্তত বাংলাদেশ

ঢাকা: দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন ও বর্ণিল আয়োজনসহ সব প্রস্তুতিই নিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মনে করেন, আয়োজক দেশ হিসেবে এই সম্মেলন বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
 
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) স্পিকারের সংসদ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোন কিছুতেই বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যায় না।

এবারের আইপিইউ সম্মেলন সেটাই প্রমাণ করবে।

স্পিকার বলেন, আইপিইউ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের অতিথিরা আসা শুরু করে দিয়েছেন। ৩১ মার্চের মধ্যেই অধিকাংশ অতিথি আসবেন।
 
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এতো বড় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা, ভাবমূর্তি অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটা আমাদের দেশের গর্ব। কাজেই কেউ চায় না কোন কিছুতে এই সম্মেলন বিঘ্নিত হোক।
 
নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো দেশ আসছে না এমন কোন তথ্য তার কাছে নেই জানিয়ে স্পিকার বলেন, কোন সম্মেলনেই সব দেশ অংশ নেয় না। কাজেই দু’চারটি দেশ না এলেও সম্মেলন হবে।
 
আর মাত্র একদিন বাদেই ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। নৌকার উপর স্টেজ করা হয়েছে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য। এছাড়া অতিথিদের বসার জন্যও ছোট ছোট নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরা হবে। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল আইপিইউ সম্মেলনের বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এই সম্মেলনকে ঘিরে বিআইসিসি সংলগ্ন বাণিজ্য মেলার মাঠে দেশীয় পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আইপিইউ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। এতে পর্যটন বিষয়ক এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের নমুনাও তুলে ধরা হবে।
 
আইপিইউ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাতীয় সংসদ এবং সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত রাস্তা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। রাস্তাগুলোতে লাইটিং এর মাধ্যমে নৌকা তুলে ধরা হয়েছে।
 
আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়াকে হেড অব ডেলিগেশন করে ১৭ সদস্যের একটি পার্লামেন্টারি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
 
নিরাপত্তা শঙ্কায় শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসতে অসম্মতি জানিয়েছে আইপিইউ সদস্যভুক্ত ৫ দেশ। এসব দেশ হলো- অস্ট্রেলিয়া, পেরু, গিনি, মালদোভা ও ত্রিনিদাদ। আর পাকিস্তান আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আগেই।
 
আইপিইউ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংসদীয় সংস্থার এ সমাবেশ সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ১৩১টি দেশের ১৫৮০ জন বিদেশি অতিথি সম্মেলনে যোগ দেবেন। এর মধ্যে ১১০ জন আইপিইউ স্টাফ, ৮২ জন স্পাউস। থাকছেন ৪৮ জন স্পিকার ও ২৯ জন ডেপুটি স্পিকার। তাদের থাকার জন্য রাজধানীর ১৫টি হোটেল প্রস্তুত। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের সদস্য ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।  
 
সম্মেলন উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনসহ সংসদ এলাকায় চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ছাড়াও বাংলার চিরায়ত রূপ তুলে ধরা হবে। থাকবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি। সেইসঙ্গে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হবে লেজার শো’র মাধ্যমে।

এবারের সম্মেলনে মূল প্রতিপাদ্য হলো, ‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’। অনুষ্ঠান আকর্ষণীয় করে তুলতে এরই মধ্যে সংসদের ভেতরের রাস্তায় স্থাপিত হয়েছে নানা রঙের মরিচবাতি শোভিত বৃক্ষ। উদ্বোধনের আগে প্রতিরাতেই এখন মহড়া চলছে।
 
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আইপিইউ এর ১৩১তম অ্যাসেম্বলিতে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউ-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম আইপিইউ-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী বর্তমানে আইপিইউ-এর হিউম্যান রাইটস কমিটি অব পার্লামেন্টারিয়ান্স এর সদস্য।  

আইপিইউ ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংসদীয় সংস্থা। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। স্বাধীন ও সার্বভৌম পার্লামেন্ট এ সংস্থার সদস্য হতে পারে। বর্তমানে আইপিইউভুক্ত সদস্য সংখ্যা ১৭০টি এবং সহযোগী সদস্য সংখ্যা ১১টি। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আইপিইউ এর সদস্যপদ লাভ করে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এসএম/জেডএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।