ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সিট নাই, মহিলা উঠাস না…!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
সিট নাই, মহিলা উঠাস না…! নারী যাত্রী বাসে ওঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন হেলপাররা। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড। টানা ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ফারহানা। মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করা ফারহানার গন্তব্য এয়ারপোর্ট। চোখের সামনে একের পর এক বাস চলে যাচ্ছে। তিনি উঠতে পারছেন না। কারণ, সিট নাই! যে বাসে উঠতে যান সেটার হেলপারের উদ্দেশ্যে চালকের উক্তি, ‘সিট নাই, যাত্রী ক্যাঁচাল করবো, মহিলা উঠাস না’!

বিরক্তি ও দুর্ভোগের মধ্যেই হাজির হলো ফুলবাড়িয়া টু এয়ারপোর্টগামী একটি বাস।  হাতের ইশারা করতেই থামল।

বাসে উঠে দেখেন মহিলা সিট তো দূরের কথা,  কোনো সিটই ফাঁকা নেই। উপরন্ত মহিলা সিটে দিব্যি বসে আছেন পুরুষ যাত্রী। তাকে উঠতে দেখে হেলপার পুরুষ যাত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, 'মহিলা সিট ছাড়েন, মহিলা সিট ছাড়েন!'

সিটে বসা ভদ্রলোক, ‘আমি আব্দুল্লাহপুর যাব উঠতে পারবো না’ বলে প্রতিউত্তর করলেন। পরে অবশ্য  অন্য যাত্রীদের হস্তক্ষেপে উঠতে বাধ্য হন তিনি।

সময়ের পরিবর্তনে বহু আগেই ঘরমুখি নারী হয়েছে কর্মমুখি। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে বাড়ছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা। এসব নারীর গণ পরিবহনে যাতায়াতের সুবিধা খুবই কম। হাতে গোনা কয়েকটি রুটে আছে মহিলা বাস সার্ভিস। ফলে  প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়ার পাশাপাশি শুনতে হচ্ছে, ‘সিট নাই’, ‘মহিলা সিট নাই’, ‘মহিলা উঠাস না। যাত্রীরা ক্যাঁচাল করবো’ এমন বিব্রতকর বাক্য।

রাজধানীতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে সাধারণত নারীর জন্য তিন থেকে ৯টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। তবে রাজধানীর বেশির ভাগ সিটিং সার্ভিসে নামেই মহিলা সিট লেখা রয়েছে।  যাত্রী ওঠানোর সময় এ নিয়ম মানে না পরিবহনগুলো। অনেক সময় এই আসনগুলোতে পুরুষ যাত্রী বসে পড়েন। এ নিয়ে চলে বাকবিতণ্ডা। এরপর ‘সম অধিকার দাবি করেন, আবার বাসে আলাদা সিট চান, নারীরা সব পারে, তাহলে দাঁড়িয়ে গেলে সমস্যা কি?- এ রকম তাচ্ছিল্যভরা ব্যাক্যে প্রতিনিয়ত বিব্রত হচ্ছেন নারীরা। হেলপারের বাধা ঠেলে বাসে উঠতে পারলেও বসার আসন পান না নারীরা।  ছবি: জিএম মুজিবুরকয়েকজন কর্মজীবী নারী জানান, বাসে যাতায়াত করা এক প্রকারের বিড়ম্বনা। প্রতিদিন অফিস আওয়ারে ঘন্টার পর ঘন্টার দাঁড়িয়ে থেকে বাসে ওঠা। আবার অফিস শেষে বাসায় ফেরা যেন যুদ্ধজয়ের সামিল। বাসের মধ্যে কয়েকটি সিট সংরক্ষিত। তা নিয়েও কটূক্তি! এরপর বাসের ভিতরে হেলপার-ড্রাইভারের নানা ধরনের কটূক্তি,পুরুষ যাত্রীর স্পর্শকাতর স্পর্শ; এসব বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয় প্রায় সময়।

সম্প্রতি ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’  খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে মহিলা,শিশু ,বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে বা বসার অনুমতি দিলে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

তবে আইন করাকে সাধুবাদ জানালেও নারী আসন বৃদ্ধির দাবি করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উম্মে আরা জিনাত।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কিছু কিছু পুরুষের একগুঁয়েমির জবাব হিসেবে আইনটা দরকার ছিল। কিন্তু আইন করে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বাসের সিটের সঙ্গে সম অধিকারের দাবি মিলিয়ে ফেললে হবে না। এখন কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। সে তুলনায় পরিবহন-সুবিধা খুবই কম। আমরা তো ছেলেদের মতো দৌড়ে বাসে উঠতে, ঝুলে যেতে পারি না। অনেক সময় চাইলেও উঠতে দেয়া হয় না। এর জন্য সংরক্ষিত সিটের পাশাপাশি মহিলা বাসের সার্ভিসও বাড়ানো প্রয়োজন।

নারী যাত্রীর বিষয়ে কথা হয় এভারেস্ট পরিবহনের হেলপার নাসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের বাসে মাত্র ৫টি মহিলা সিট। এগুলো পূরণ হইলে আর মহিলা যাত্রী ওঠাই না। মহিলাগো নিয়ে ঝামেলা হয়। বাসের মধ্যে দাঁড়াইতে পারে না। দাঁড়ানো যাত্রী বেশি ওঠানো যায় না।

বিআরটিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীর ১৯টি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। তবে মিরপুর রুটে  অফিস আওয়ারে দাঁড়িয়ে থেকে এ বাসগু্লোর উপচেপড়া যাত্রী দেখে বোঝা গেল, কর্মজীবী নারীর তুলনায় এই সংখ্যাটা বড় অপ্রতুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘন্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।