সে মনে করে, ইচ্ছা আর মনোবল থাকলে শারীরিক এ প্রতিবন্ধকতা তার পথচলাকে রুখতে পারবে না।
এ বোধ আর মনোবল থেকেই প্রাথমিক, মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে সে।
রবিবার এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা চলাকালে ফেনী সরকারি কলেজকেন্দ্রে ১৯ নাম্বার রুমে গিয়ে দেখা হয় এ অদম্য কিশোরীর সাথে। অন্যসব সুস্থ সবল শিক্ষার্থীর মতই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তার মনোবল যে কাউকেই প্রেরণা যোগাবে। ওই কক্ষের পরিদর্শক কর্তব্যরত শিক্ষক মোতাহের হোসেন জানান, শহরের জয়নাল হাজারী ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে নাদিয়া।
এরপর কথা হয় জয়নাল হাজারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিমের সঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে জানান,পৌর শহরের মধুপুর গ্রামের প্রবাসী নূর আহাম্মদ ভূঁঞার বড় মেয়ে নাদিয়া দুই হাত ও পায়ের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
জন্মগত প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও পরিবারের কিংবা সমাজের বোঝা না হয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে নাদিয়া। লেখাপড়ায় তার আগ্রহ দেখে পরিবার তাকে স্কুলে ভর্তি করায়। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সালে গোবিন্দপুর স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে।
কথা হয় নাদিয়ার প্রাইমারি স্কুল পূর্ব মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আলমের সাথে।
তিনি জানান, শত কষ্টের পরও নাদিয়া থেমে থাকতে চায়নি। আর সে কারণেই সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা জিপিএ ৩.৮০ পেয়ে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়েছে।
নাদিয়ার উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক মধুপুর জুনিয়র স্কুলের শিক্ষক শামছুল হক জানান, মেয়েটি হাটতে চলতে পারে না। ডান হাত, ডান পা একদম বাকাঁনো এবং চিকন। তারপরও ওর ইচ্ছাশক্তির কোনও ঘাটতি নেই।
কথা হয় নাদিয়ার গ্রামের বাসুচন্দ্র দেব নামের এক জনের সাথে। তিনি জানান, প্রতিবন্ধী হলেও নাদিয়া থেমে নেই। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে কম্পিউটার শেখে। পাড়ার অন্য শিশুদের বিনামূল্যে পড়ায়।
জয়নাল হাজারী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম জানান, নাদিয়া শারিরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেধার প্রতিযোগিতায় নেমে লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ায় তার আগ্রহ দেখে কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা দেওয়া হয়।
বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার হল পরিদর্শক মোতাহের হোসেন জানান, নাদিয়াকে অন্য সুস্থ সবল শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই বসানো হয়। তাকে অতিরিক্ত সময় দেয়া হলেও তা সে নেয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ সময় নিয়েই সে পরীক্ষা দিয়েছে।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় অদম্য নাদিয়ার সঙ্গে। তখন সে এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে বাড়ি ফিরছিল।
বাংলানিউজকে সে জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সে কখনোই নিজের পথ চলার বাধা মনে করেনি। সে মনে করে, ইচ্ছা থাকলে সব বাধা জয় করা যায়। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ যদি শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের সহযোগিতা করে, তাহলে এই মানুষগুলোও ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। নিজেঁর মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।
নাদিয়া জানায়, পড়াশুনা শেষ করে সে বড় কোনও সরকারি চাকরি করতে চায়। সে পরিবারের সমাজের বোঝা হতে চায় না। বরং সে চায় পরিবারের হাল ধরতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
জেএম/