তবে এ ঘোষণায় নগরবাসীর মনে সন্তুষ্টি থাকলেও বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
নগরবাসী ও পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ঠেকাতে এর আগে অনেক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
তারা এও বলছেন, বিআরটিএ ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে সিটিংয়ের নামে নৈরাজ্য ১৫ এপ্রিল থেকেই রাজধানীতে বন্ধ হয়ে যাবে।
বুধবার (০৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে যাতায়াত করা বেশ কয়েকজন যাত্রী ও পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন মন্তব্য পাওয়া যায়।
রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা মো. তমাল, বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি প্রতিদিন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মতিঝিলে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, খবরে পড়েছি সিটিং সার্ভিস নাকি বন্ধ হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আমার মতো সব যাত্রীই খুশি হবেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিটিংয়ের নামে রাজধানীতে এতোদিন যে অনিয়ম চলছে তা বন্ধ হওয়া দরকার। সিটিং সার্ভিসগুলো হচ্ছে পকেটের টাকা কাটার মেশিন।
রাজধানীর মনিপুরীপাড়ার বাসিন্দা নুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সিদ্ধান্ত তো হয়েছে, এখন দেখতে হবে আসলেই ১৫ তারিখ থেকে বন্ধ হয় কিনা। বাংলাদেশে তো অনেক সিদ্ধান্তই হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন দেখা যায় না। সিদ্ধান্তেই না ঝুলে ১৫ তারিখ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হলে সিটিংয়ের অত্যাচার থেকে আমরা রক্ষা পাবো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জামেল হক চৌধুরী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য বন্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আন্তরিক থাকলে অবশ্যই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তাদের এ ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।
এ সময় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি সন্দিহান প্রকাশ করে বলেন, তারা চাইলে তো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু যদি বাস্তবায়ন নিয়ে ভিতরে অন্য কাহিনী থাকে তা হলে তো সমস্যা!
তবে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বাংলানিজকে বলেন, আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ভিজিলেন্স টিম ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) ম্যাজিস্ট্রেটসহ আমরা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় অভিযানে নামবো। কোনো পরিবহন কর্তৃপক্ষ যদি এ সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে যেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তেমনি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এরইমধ্যে রাজধানীতে চলাচলকারী সব পরিবহনের মালিকপক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত না মানার কোনো সুযোগই নেই।
সিদ্ধান্ত না মানলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীতে বিআরটিএ পরিচালিত একটি মোবাইল কোর্ট পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, সিটিং সার্ভিসের বিষয়টি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ই খুশি। বাস মালিকদের সরকারের নির্ধারণ করা ভাড়াই নিতে হবে। আর কেউ যদি তা অমান্য করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সব ধরনের গণপরিবহনের সিটিং সার্ভিস নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫,২০১৭
এমএ/জেডএস