ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘মুসলমানের রক্তে লাভবান হচ্ছে অন্যরা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৭
‘মুসলমানের রক্তে লাভবান হচ্ছে অন্যরা’ বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: একটি মহল পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কলুষিত করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ইসলামের শান্তির বাণী সবার কাছে পৌঁছে দিতে আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব ড. আবদুল মুহসিন আল কাসিম এবং মক্কার হারাম শরিফের দ্বিতীয় প্রশাসনিক প্রধান ড. মুহাম্মাদ বিন নাসের আল খুজাইম উপস্থিত ছিলেন।


 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং যুদ্ধ লেগে থাকে, তাতে লাভবান হয় কারা? যারা অস্ত্র তৈরি করে, অস্ত্র বিক্রি করে, তারা লাভবান হয়। ’
 
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই লাভটা কার বিনিময়ে? মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে। মুসলমানের রক্তের বিনিময়ে আজকে অন্যরা লাভবান হয়ে যাচ্ছে। ’
 
কিছু বিপথগামীর জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের কুফল অন্যদের ভোগ করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুসলমানরা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে। অনেক দেশে তাদের নানাভাবে হেনস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, অপমানজনক অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাদের জীবন আশঙ্কার মধ্যে পড়ছে। ’
 
‘একটা কারণে, মুসলমান হয়ে মানুষ হত্যা করে ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ শব্দটা জুড়ে দিচ্ছে। ’ 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের কোনো ধর্মও নেই, সীমানাও নেই। ওই জঙ্গিবাদটাই তাদের ধর্ম। তারা ভুল পথে যাচ্ছে। ’
 
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো মতে পবিত্র ধর্মকে হেয় হতে দিতে পারি না। ’
 
বিপথগামীদের সুপথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে চলে গেছে তারা যদি আত্মসমর্পণ করে এবং সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে চায় তাদের সব রকমের সহযোগিতা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দেবো। ’
 
ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম সবসময় অত্যন্ত মানবতাবাদে বিশ্বাস করে, শান্তির ধর্ম। ইসলাম শিক্ষা দেয় অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ দেখাতে, সহানুভূতিশীল হতে। ’
 
ইসলামের শান্তির বাণী সবার কাছে পৌঁছে দিতে ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম সে বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। ’
 
‘কার কার ছেলেমেয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গির পথে চলে গেছে তাদের খোঁজ নেওয়া। তাদের সৎ পথে নিয়ে আসা। যেন সুপথে তারা ফিরে আসে। সেই পদক্ষেপ নেবেন। ’
 
ইমামদের সব সময় সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। ’
 
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সৌদির পাশে থাকবে বাংলাদেশ
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সৌদি আরবের উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান।
 
বাদশাহর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে তাদের ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বাদশাহ। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।  
 
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে আমরা সবসময় তার পাশে আছি এবং এক হয়ে কাজ করবো। ’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে যেন শান্তি ফিরে আসে। প্রতিটি দেশে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব তৈরি করতে সৌদি বাদশা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটাকে আরও কার্যকর করবেন। আমরা সবসময় তার পাশে আছি, তার পাশে থাকবো। ’
 
মক্কা-মদিনার দুই ইমাম তাদের বক্তব্যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ইসলামের শান্তির বাণীর কথা তুলে ধরেন তারা। তাদের বক্তব্য বাংলায় তরজমা করে শোনানো হয়।
 
প্রধানমন্ত্রী দুই খতিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, খতিবদের বক্তব্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী ভূমিকা আরও সুদৃঢ় করবে।
 
খতিবদের বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত ওলামা-মাশায়েখদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুনে গেলেন তাদের কথা। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন।
 
সম্মেলনে যোগ দিতে দুপুরের আগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন ওলামা-মাশায়েখরা। ৩টায় সম্মেলন শুরুর আগেই লাখো ওলামা জড়ো হন আয়োজনস্থলে।  
 
মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে আসা মুসল্লিদের সভাস্থলে ঢুকতে হয় দোয়েল চত্বর ঘুরে তিন নেতার মাজার গেট, মন্দির গেট, বাংলা একাডেমি গেট, টিএসসি গেট ও চারুকলা গেট দিয়ে। তবে ভেতরে ঢোকার বিড়ম্বনা এড়াতে হাজার হাজার মুসল্লি বাংলা একাডেমির সামনের সড়ক, টিএসসি মোড় ও শাহবাগ সড়কের গাছের ছায়ায় অবস্থান নেন।
 
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।