ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বিপন্ন জনপদে বেঁচে থাকার হাহাকার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৭
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বিপন্ন জনপদে বেঁচে থাকার হাহাকার! ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সোনাগাজী উপকুলের চরশাহ পুর গ্রাম-ছবি-ডালিম হাজারী

সোনাগাজী থেকে ফিরে: চর শাহপুর, ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতিবছরই ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবেলা করতে হয় এ চরের হাজারো মানুষকে।

প্রকৃতির বৈরিতায় মানুষগুলো এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এরপরও তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যান অবিরত।

দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এখানকার মানুষের নিয়তির ওপর ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ঝড়ের মৌসুমে চরের একদিকে ভয়াল ঝড়ের প্রকোপ, অন্যদিকে উত্তাল নদী হয়ে ওঠে অগ্নিমূর্তি। সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকা ছাড়া চরের মানুষের আর কোনো উপায় থাকে না।

বুধবার (৫ এপ্রিল) চৈত্রের অসময়ের এমনই একটি ঝড়ে এ গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বাড়ি-ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়ে পড়ে কয়েক মাইল দূরে। গাছ ফালা উপড়ে যায়। ফসলের মাঠ হয়ে যায় তছনছ।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এই এলাকা ঘুরে এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে বাংলানিউজ।

বিবি ফিরোজা নামে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী জানান, কয়েক বছর আগে একই উপজেলার চর চান্দিয়ায় নদী ভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি সব হারান তিনি। ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সোনাগাজী উপকুলের চরশাহ পুর গ্রাম-ছবি-ডালিম হাজারীএরপর গ্রামের বিত্তশালী ও তার আত্মীয়রা মিলে শাহাপুরে একটি ঘর তুলে দেন।

সে ঘরটিই ছিল বেঁচে থাকার এবং মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল। কিন্তু অকালে ঝড় তার মাথা গোজার ঠাইঁটা বুঝি আর রাখলো না। শুধু ভিটেটা রেখে সবটাই উড়িয়ে নিয়েছে। ঘরের খাট যা ছিল সবই ভেঙে টুকরো টুকরো।

ফিরোজা বলেন, ‘আল্লাহ রক্ষা করেছে- ভেবেছিলাম হয়তো বাঁচতে পারবো না- ঝড় আমাদেরও তুলে নিয়ে যাবে।

কিছুদূর গিয়ে কথা হয় ফাতেমা নামে আরেক গৃহবধূর সঙ্গে। তিনি জানান, ঝড় তার বাড়ি ঘর সব তছনছ করে দিয়েছে।

অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এক টুকরো জমি কিনে শাহপুরের এখানে বাড়িটি করেছেন তিনি।

বাড়ি করতে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন একটি ব্যাংক থেকে। এছাড়া গ্রামের আরও একজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। সে টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি তিনি। কিন্তু ঘরতো আর রইলো না- ঝড় উড়িয়ে নিলো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জরুরি ত্রাণ হিসেবে যেসব শুকনো খাবার দিয়েছেন তা খেয়েই কাটছে দিন। কেউ কেউ আবার তাও পাননি। ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সোনাগাজী উপকুলের চরশাহ পুর গ্রাম-ছবি-ডালিম হাজারীকথা হয় সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ওপর দিয়ে ভয়ে যাওয়া প্রচণ্ড শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়ে নয়টি ইউনিয়নের ১৫শটি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এরমধ্যে শাহপুরে চারশটির ওপরে ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশিষ্টগুলো আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে নিদর্শনা দেওয়া হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠানোর জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এএটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।