বেসরকারি (এনজিও) সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এতে একদিকে যেমন তারা রবি শস্য আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার পর নতুন করে মনপুরার উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা এবং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের হাজারো কৃষক এ মৌসুমে মুগ, ফেলন, মরিচ, চিনাবাদাম, তিল ও সয়াবিনসহ বিভিন্ন বরিশস্যের আবাদ করেছিলেন। এ ফসল আবাদ করতে গিয়ে তাদের এনজিও ও ব্যংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিতে হয়েছে। কিন্তু বাঁধ না থাকায় গত চারদিনের চার দফা জোয়ারের পানিতে এসব ফলস তলিয়ে গেছে। লবণাক্ত পানিতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির রব্যিশস্য। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
সোনার চর এলাকার কৃষক মো. জাফর জানান, কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজর টাকা লোন নিয়ে তিনি মুগ ডাল আবাদ করেছেন কিন্তু জোয়ারের পানিতে সব তলিয়ে গেছে।
ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার নসু মিয়া জানান, ২ কড়া জমিতে মরিচ ও মুগ ডাল চাষ করেছেন, পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক খোকন জানান, দারদেনা করে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ফসলের আবাদ করেছিলেন তার পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে।
কাউয়ার টেক এলাকার বাবর আলী বলেন, জোয়ারের পানিতে ডাল, মরিচ ও চিনাবাদাম ভেসে গেছে, একই কথা আরেক কৃষক জাকির হোসেনের। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে খেত নষ্ঠ হয়ে গেছে, মনে করেছি এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো কিন্তু জোয়ারের পানিতে সব শেষ।
কৃষকরা জানালেন, অতি জোয়ারে ১০ গ্রামের কৃষকদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। যারা ফলস বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন বলে আশা করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই এখন দিশেহারা।
সরেজমিন গিয়ে গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে যখন কৃষকরা ফসল তোলার কথা ভাবছিলেন ঠিক তখনি এমন বিপর্যয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। বিকল্প ব্যবস্থায় ঘুড়ে দাঁড়ানোর নেই কোন উপায়। তাই চোখ-মুখে তাদের হতাশার ছাপ। ফসলের দিকে চেয়ে আছেন কৃষকরা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তিল, মুগ ডাল, ফেলন, চিনা বাদামের।
উপেজলা কৃষি অফিস সূত্রে মতে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা, উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে ১০ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে রবিশস্য আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মুগ ডাল ৯ হাজার ৫শ হেক্টর, ফেলন ১২০ হেক্টর, মিস্টি আলু ১৫০ হেক্টর, মরিচ ৬০০ হেক্টর, চিনা বাদাম ১৬০ হেক্টর, সয়াবিন ৫ হেক্টর তিল ৬ হেক্টর এবং সবজি ৩২০ হেক্টর।
এর মধ্যে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৩৫০ হেক্টর জমির মুগ, ২৫ হেক্টর জমির ফেলন, ১৮০ হেক্টর জমির মরিচ, ৩৫ হেক্টর চিনা বাদাম, ৬ হেক্টর তিল, ৫ হেক্টর সয়াবিন এবং ৫০ হেক্টর জমির সবজি। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১৬৮০ হেক্টর। যা টাকার অংকে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার গুপিনাথ দাস বলেন, বিপর্যয় কাটাতে কৃষকদের রবি মৌসুমে চাষাবাদ বন্ধ দিয়ে আউশ মৌসুমে চাষাবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এতে কৃষকরা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবে।
ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাওসার আলম বলেন, মনপুরা উপজেলায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার বাঁধ তৈরির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ০৭ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ