আর এই নালিশ দিয়েছেন আরেক শিক্ষক। স্কুলটির শিক্ষকদের দফতরে ডেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
মন্ত্রীর নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মেদ্দাপূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ চার শিক্ষককে প্রশাসনিক বদলি করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ওই দুই শিক্ষকসহ স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ডেকে এ বিষয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
মন্ত্রণালয় সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ‘গ’ শাখার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার। ওই পরীক্ষায় একটি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ছিল স্বাধীনতার ঘোষক কে? এর উত্তরে ‘গ’ শাখার ২১ জন শিক্ষার্থীকে জিয়াউর রহমানের নাম লেখার নির্দেশ দেন সালমা আক্তার।
সালমা আক্তার শিক্ষার্থীদের জিয়ার নাম লিখতে বলার সময় পরীক্ষা কক্ষের পাশেই ছিলেন অপর সহকারী শিক্ষক কবিতা ভূঞা। জিয়াউর রহমানের নাম শুনে তিনি এসে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীকে অভিযোগ দেন।
গত ২ এপ্রিল মন্ত্রী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছাড়াও স্কুলের পাঁচজন শিক্ষককে ডেকে কারণ জানতে চান। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সালমার সঙ্গে কবিতার দ্বন্দ্বের জেরে জেদ করেই তিনি জিয়াউর রহমানের নাম বলেছিলেন। শিক্ষার্থীরা জিয়াউর রহমানের নাম লিখলে সবাইকে নম্বরও দিয়েছেন- এসব বিষয়ে লিখিত স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন সালমা আক্তার।
মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে হাইকোর্ট থেকে আদেশটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়; হাইকোর্টের আদেশ ছিল- জিয়াউর রহমান নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
তবে সালমা আক্তারের বাবা মুক্তিযোদ্ধা, ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে বলেও তিনি মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। মন্তব্যের জন্য সালমা আক্তার ও কবিতা ভূঞার সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, সালামা আক্তার ছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম এবং সহকারী শিক্ষক জাহানারা বেগম ও অভিযোগকারী কবিতা ভূঞাকে প্রশাসনিক বদলি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে। অধিদফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দোলোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ডাক পেয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট গেয়েছিলাম, সালমা আক্তার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন, লিখিত দিয়েছেন। কিন্তু বিনা দোষে আমি দোষী হয়ে গেলাম। উপজেলা সদরের শেষ মাথায় মইন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাকে বদলি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ