ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’। তিন সম্প্রদায়ের তিন উৎসবের নামের আদ্যাক্ষর দিয়েই নামকরণ করা হয়েছে ‘বৈসাবি’।
আগামী ১২ এপ্রিল থেকে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে ইতোমধ্যে এ উৎসবকে ঘিরে পাড়া-মহল্লায় শুরু হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা।
তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর বর্ণিল আয়োজনে এ উৎসব উদযাপিত হলেও তৃণমূল জনগোষ্ঠীর উৎসব-আনন্দের নান্দনিকতায় থাকে ভিন্ন মাত্রা। অন্যদের পাশাপাশি দরিদ্র, হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঘরে ঘরেও ছোট্ট আয়োজনে পরম আনন্দে উৎসব উদযাপিত হয়। তবে সেখানে বর্ণিলতার ছাপ থাকে না, শহুরে আনন্দের ঢাক-ঢোল বাজে না। সে সকল দরিদ্রপল্লীতে বৈসাবি’র আনন্দ শুধুই একগুচ্ছ পাহাড়ি ফুলের আনন্দ শোভাযাত্রা। মনের উচ্ছ্বাসে তুষ্ট হয়েই উৎসব উদযাপন করে থাকেন বিবর্ণ চেহারার মানুষগুলো।
এ পরিবারগুলোও জীবিকার সকল অবলম্বনের মাধ্যমে উৎসব উদ্যাপনের প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নতুন পোশাকসহ উৎসবের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে বাবার হাত ধরে ছোট শিশুরা আসছে হাট-বাজারে। তবে অধিকাংশ দরিদ্র শিশুর বায়না পূরণ না হওয়ায় আনন্দ গুমড়ে কাঁদছে অভাবের সংসারে।
তৃণমূলের এ দরিদ্র পরিবারগুলোর অভিযোগ, প্রতি বছর উৎসবকে ঘিরে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ থাকলেও সরকারি অনুদান পৌঁছে না তাদের কাছে। জেলা-উপজেলায় সরকারি অর্থে নামমাত্র শোভাযাত্রা, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
তারাপরও পাহাড়ে ধনী-দরিদ্রের এমন বৈষম্যের মাঝেই প্রতি বছর বৈসাবি উদযাপিত হয়ে থাকে, নিয়ে আসে আনন্দের বারতা। উৎসবে যোগ দিতে তাই জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষগুলোও শহর ছেড়ে আসতে শুরু করেছেন। পাহাড়ে বাংলা নববর্ষ এবং বৈসাবি উদ্যাপনে পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং সম্মিলিত বৈসাবি উদ্যাপন পরিষদও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বৈসু: তিন দিনব্যাপী বৈসু উৎসব উদ্যাপন করে ত্রিপুরা সম্প্রদায়। প্রথম দিন হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিন বৈসু ও শেষ দিন বিশিল কাতাল উদ্যাপিত হয়।
১৩ এপ্রিল হারি বৈসুতে ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীরা বন জঙ্গল থেকে ফুল সংগ্রহ করেন। বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সে ফুল দিয়ে সাজানো হয় ঘরের দরজা-জানালা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজানো থেকে বাদ পড়ে না গৃহপালিত পশু-পাখিরাও।
দ্বিতীয় দিন ১৪ এপ্রিল বৈসুতে সকালে ছোটরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়। তারপর চলে অতিথি আপ্যায়ন।
তৃতীয় দিন ১৫ এপ্রিল ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দিনপঞ্জি অনুসারে নতুন বছর। ওইদিন ছোটরা বড়দের স্নান করিয়ে বস্ত্র দান ও মন্দিরে মন্দিরে পূজা দিয়ে থাকে। সাংগ্রাই: মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব চলে চার দিন ধরে। পর্যায়ক্রমে উদ্যাপিত হয় সাংগ্রাই, আক্যে, আটাদা ও আতং। চার দিনই বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, অতিথি আপ্যায়নের সঙ্গে থাকে বিশেষ পাঁচন রান্নাসহ নানা আয়োজন।
বিজু: চাকমা জাতিগোষ্ঠীর তিন দিনের বিজু উৎসবে থাকে যথাক্রমে ফুল বিজু, মূল বিজু এবং গজ্জাপজ্জা।
প্রথম দিন ফুল বিজুর সকালে চাকমা তরুণ-তরুণীরা বন-জঙ্গল থেকে ফুল এনে সবার মঙ্গল কামনায় নদীতে ভাসিয়ে দেন, ঘর-বাড়িকে সাজিয়ে তোলেন। বাকি দু’দিনও ভরপুর থাকে বিভিন্ন সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এএটি/এএসআর