রোববার (৯ এপ্রিল) বিকেলে নাটোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামছুল আল আমিনের আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দিতে রাজীব গান্ধী চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন।
এর আগে কড়া নিরাপত্তায় বিকেল ৩টা ২২ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার জানান, ২০১৬ সালের ৫ জুন বনপাড়ার খ্রিস্টান পল্লীর মুদি দোকানদার সুনীল গোমেজকে তার দোকানেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে মোট ৬ জন অংশ নেন। রাজীব গান্ধী ছিল ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।
তারা হত্যার আগে নাটোর শহরে কয়েকদিন অবস্থান করে ঘটনাস্থল কয়েকবার পরিদর্শন করে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। একই সঙ্গে হত্যার পর দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার জন্য সুবিধামত স্থান খোঁজেন তারা।
ঘটনার দিন নাটোর শহর থেকে ২ জন, সিরাজগঞ্জ থেকে ২ জন ও ঈশ্বরদী থেকে ২ জন এসে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। হত্যার পর তারা কয়েকদিন নাটোরেই অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ঢাকার হলি অর্টিজান রেস্টুরেন্টে হত্যাকাণ্ডে অংশ গ্রহণকারী তামিম চৌধুরী, বাধন, ইমতিয়াজসহ কয়েকজনের নাটোরে যাতায়াত ছিল। জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীসহ কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে সুনিল গোমেজকে হত্যা করেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্যই তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম ও সুনীল গোমেজ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি আব্দুল হাই উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে জেএমবি সদস্য জাহাঙ্গীরকে নাটোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
শুনানি শেষে বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরো জানান, তাকে ৩ এপ্রিল গাইবান্ধার সাঘাটা থানার পূর্ণভুতপাড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে গাইবান্ধা থানার পুলিশ।
পরে নাটোরের বনপাড়ার খ্রিস্টান পল্লীর মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যায় জড়িত থাকায় তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
ওসি জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার একটি মসজিদে নামাজ শেষে অপরিচিত এক লোক তাকে জেহাদ সর্ম্পকে জানার জন্য দাওয়াত দেন। তার কথায় বিশ্বাস করে জেএমবি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং শারীরিক ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন রাজীব। এর আগে তাকে কোচিং এর আদলে জেএমবির ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
পরে শায়খ আব্দুর রহমানের বিচার হলে তাদের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালের দিকে জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে নব্য জেএমবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশে খ্রিস্টান, হিন্দুসহ সংখ্যালঘু ও বিদেশিদের হত্যা করেন তারা।
তিনি আরো জানান, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পূর্ণভুতপাড়া গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী মোট নয়টি নামে পরিচিত। অপর সাতটি নাম হলো শান্ত, সুভাস, আবু ওমর, আদিল, টাইগার, নাসির ও জাকির।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ০৯ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ