ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জঙ্গি রিপনের সঙ্গে দেখা করলেন স্বজনেরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
জঙ্গি রিপনের সঙ্গে দেখা করলেন স্বজনেরা

সিলেট: সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা  জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্বজনেরা।

রোববার (০৯ এপ্রিল) দুপুরের পরে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে এসে রিপনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যান তার চাচা আব্দুন নুর, চাচি আজিজুন্নেছা, চাচাতো বোন রুমেনা, ফুফাতো বোন লুৎফা বেগম ও ফুফাতো ভাই জাবির হোসেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পরদিন দেখা করলেন তারা।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত রিপনের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করে গেছেন কিছু স্বজন। সোমবার (১০ এপ্রিল) ফের শেষবারের মতো দেখা করতে আসতে পারেন তার বাবা-মাসহ আরো আত্মীয়-স্বজনেরা।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলেও ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। এখন শুধু নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি’।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির মধ্যে অন্য দু’জন প্রধান আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। তাদেরও প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

এখন তিন জঙ্গিরই ফাঁসি কার্যকরে কারাগারে প্রস্তুতি চলছে বলে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তবে প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর  ফাঁসি কার্যকরে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেছেন, ‘জেলকোড অনুসারে ২১ দিনের কমে নয় এবং ২৮ দিনের ঊর্ধ্বে নয়- এ সময়সীমার মধ্যে কার্যাদেশ পালন করতে হবে। আমরা সেজন্যই অপেক্ষা করছি। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। সব ফর্মালিটি শেষ হলেই আমরা রায় কার্যকর করবো’।

কাশিমপুর ও সিলেট- দুই কারা সূত্রই জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে কারাগারে পৌঁছালে ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত  প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখা আছে।     

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই আসামি ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল।

গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আসামিরা এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানালেও গত ১৯ মার্চ তা খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হলে পরদিন ২২ মার্চ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত।
 
মৃত্যু পরোয়ানা ও সর্বশেষ রায় শোনার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন।

শনিবার (০৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর সরকারের সিদ্ধান্তে এখন জেলকোড অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করবে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।