এটি অনেকটা স্টিকি রাইস (আঠালো ভাত) এর মতো। ভাপে রান্না করা এ ভাত আকৃষ্ট করে রসনাবিলাসীদের।
বোয়াল, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভাজা মাছ দিয়ে বিরুন চালের গরম ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা। আবার দুধ, গুড় ও নারকেল মিশিয়ে খেতেও পছন্দ করেন অনেকে।
সকালে তেল বা ঘি, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে বিরুনভাত ভেজেও খান কেউ কেউ।
স্থানীয়ভাবে অনেকের কাছে এ চালটি বিন্নি চাল হিসেবেও পরিচিত। সুস্বাদু পিঠা তৈরিতে বিরুন চালের জুরি নেই। বিভিন্ন উৎসব-পার্বন এলে গ্রামবাংলার কৃষাণিরা বিরুন চাল দিয়ে তৈরি করেন নারকেলের পাটিসাপ্টা, পায়েস, টুইপিঠা, বিরুনপুরি, চুঙ্গাপিঠাসহ নানা রকম খাবার। এসব পিঠার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠা সিলেট অঞ্চলের মানুষের কাছে খুব প্রিয়। ভেজা বিরুন চাল নরম করে নির্দিষ্ট জাতের বাঁশের চুঙ্গার মধ্যে ভরে খরকুটা দিয়ে পুড়িয়ে এ পিঠা তৈরি করা হয়। যা দুধের মালাই, খেঁজুরের গুড় ও দুধের সর দিয়ে খেতে মজা। তবে দিনদিন বিলুপ্ত হতে চলেছে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ঐতিহ্যবাহী এ চাল।
কৃষকরা জমিতে অন্যান্য ধানের পাশাপশি নিজেরা খাওয়ার জন্য স্বল্প পরিমাণে বিরুন ধান চাষ করেন। প্রতি বছরের বোরো ও আমন মৌসুমে কালো ও লাল বিরুনসহ বিভিন্ন ধরনের বিরুন ধান চাষ করেন তারা। অন্যসব ধানের তুলনায় এ ধানের ভাত সুস্বাদু। তাই ব্যয়বহুল ও ফলন কম হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা অল্প হলেও এ ধান চাষ করেন। সুগন্ধী এ ধান ঘরে উঠানোর পর কৃষাণিরা ভাত ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে নিজেরা তো খানই, সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদেরও আপ্যায়ন করে থাকেন। বিশেষ করে জামাই এলে এ ভাত দিয়ে অপ্যায়ন করা চাই-ই চাই। তাই ঐতিহ্যবাহী আঠালো এ ভাতকে জামাইভাতও ডাকেন কেউ কেউ।
অনেকে বিরুন চাল শহরে ও প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনকে পাঠাতেও ভোলেন না। ক্ষুদ্র পরিসরে চাষ করা কৃষকদের বিরুন ধান সাধারণত বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল কৃষকরা মাঝে মধ্যে এ চাল বিক্রি করে থাকেন। সিলেট অঞ্চলের বাজারে এ চালের দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা গ্রামের কৃষাণি শাহিনুর বেগম বাংলানিউজকে জানান, বিরুন চালের ভাত ও পিঠা তৈরি করে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো এ অঞ্চলের প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারের রীতি। থালায় গরম গরম নরম বিরুন ভাত ও মাছ ভাজা তাদের পরিবারের সবার প্রিয় খাবার।
একই গ্রামের রাহিয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, বিরুন ভাত তরকারি দিয়েও খাওয়া যায়। এর সঙ্গে খাওয়ার জন্য তরকারিতে ঝোলের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হয়। ওই ভাত যেদিন রান্না হবে সেদিন বাজার থেকে ভালো মাছ অথবা মুরগি কিনে আনেন বাড়ির কর্তারা।
বিরুন ভাত ও বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে রান্না করা তরকারি তাদের পরিবারের সবাই মিলে তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে থাকেন, যোগ করেন রাহিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এসআই