ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আদালতের নির্দেশে রাওদা হত্যা মামলা রেকর্ড করলো থানা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
আদালতের নির্দেশে রাওদা হত্যা মামলা রেকর্ড করলো থানা

রাজশাহী: বিখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা ও রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী রাওদা আতিফের (২০) মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এজাহারটি মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশ। 

সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর আদালতে রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ এজাহারটি দাখিল করেছিলেন। আদালত এজাহারটি আমলে নিয়ে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড এবং তদন্ত করার জন্য শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এজাহারসহ আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। এরপর রাতে এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আনোয়ার আলী তুহিনকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

তবে মামলার পর অভিযুক্ত একমাত্র আসামি রাওদার কাশ্মীরী বান্ধবী সিরাত পারভীনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে কিনা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।  

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, মামলার এজাহারে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যার ভিত্তিতে বলা হয়েছে রাওদা আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।  

মূলত তিনি এই বিষয়গুলো নিয়েই তদন্ত শুরু করবেন। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আসামিকে গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও থাকবে বলে জানান থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সোমবার দুপুরে রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বলেন ‘I appeal for a fair investigation and justice to my daughter’. অর্থাৎ ‘আমি নিরপেক্ষ তদন্ত এবং মেয়ের ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন করেছি’। এছাড়া এই কথা লেখা একটি কাগজের টুকরোও গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় বুকে ধরে রাখেন রাওদার বাবা।

তিনি বলেন, মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে রাওদার বান্ধবী কাশ্মীরী ছাত্রী সিরাত পারভীন ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাওদাকে ফলের জুস খেতে দিয়েছিল। বিষয়টি ওই দিনই রাওদা তার মাকে মোবাইলে জানিয়েছিল। এছাড়া মৃত্যুর পর সবার আগে সিরাতই চিৎকার দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছিল।  

পরে সবাইকে নিয়ে দরজা ভেঙে রাওদার রুমে ঢোকার কথা বললেও তার ছিটকানি ভাঙার কোনো চিহ্ন মেলেনি। এছাড়া, সেখানে কোনো টেবিল ছিল না। যেখানে চেয়ার রেখে তার উপর দাঁড়িয়ে রাওদা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে বলা হচ্ছে। কারণ কেবল চেয়ারে উঠলে তার ফ্যান হাতে পাওয়ার কথা নয়।

ফলে মামলার পর থেকেই গুঞ্জন উঠেছে শিগগিরই পুনঃময়নাতদন্তের জন্য রাওদার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। এমনটি করা হতে পারে বলেই অনেক চিন্তা-ভাবনার পর রাওদার মরদেহ মালদ্বীপ না নিয়ে রাজশাহীতে দাফন করা হয়।

এদিকে, রাওদার আত্মহত্যার ঘটনাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রাজশাহী মহানগর শাখার পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম জব্দ করা রাওদার মোবাইল ও ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সোমবার আদালতে আবেদন করেন। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এর শুনানি হয়নি।

এছাড়া মালদ্বীপ থেকে আসা দুই পুলিশ কর্মকর্তা গত ৭ এপ্রিল ঘটনার তদন্ত শেষে দেশে ফিরে যান। তবে যাওয়ার আগে এই ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তারা।  

সোমবার দুপুরে রাওদা আতিফের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেন তার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি করেন তিনি। রাওদার বাবার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল মনির। মামলায় রাওদার বান্ধবী কাশ্মীরী ছাত্রী সিরাত পারভিনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছাত্রী হোস্টেলে রাওদার ব্লকেই থাকেন।

গত ২৯ মার্চ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রাওদার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এই মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাওদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি নারী হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে উঠেছিলেন তিনি।

ময়নাতদন্ত শেষে গত ১ এপ্রিল দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজশাহীর হেতমখাঁ গোরস্থানে রাওদা আতিফের মরদেহ দাফন করা হয়। পরে ওই দিন বিকেলেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য কোথাও কোনো আঘাত বা নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।