বিস্তৃর্ণ হাইল হাওর সংলগ্ন শ্রীমঙ্গল উপজেলার নিভৃত এক গ্রাম হাজীপুর। এ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং হাওর-বিলের জবরদখলকারী ফজর আলী ও তার বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিল।
সরকারি খাস জমি এবং বিল দখল, মৎস্য খামার চুরি, সাধারণ মানুষের জমিজমা দখল, এলাকার মানুষকে নির্যাতন করে ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল ফজর ও তার বাহিনীর প্রধান কাজ। তাদের ভয়ে কথা বলার স্বাধীনতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল নিরীহ হাজীপুরবাসী।
সম্প্রতি এ এলাকায় একটি খুনের পর ফজর ও তার বাহিনীর সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। হাজীপুরে এখন ফিরে এসেছে শান্তি, ফিরে এসেছে নিরাপত্তা। তবে এলাকায় শান্তির এ সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে চলতি বছরের ৩০ মার্চ বলি হোন সবারপ্রিয় ধর্মপ্রাণ সানজব আলী।
এ ব্যাপারে সানজব আলীর ছোটভাই মিন্নত আলী ১ এপ্রিল ফজর আলীসহ ১৫ জনকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২৯ মার্চ দুপুর আড়াইটায় আবদুল জলিলের বাড়ির উঠানে ফজর, তার ছেলে খোকন, নাজমুলসহ আরো কয়েকজন অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সানজবকে হত্যা করে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে হাজীপুর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, একটি মৎস্য খামারের ভাগবাটোয়ারা নিয়েই হাজীপুর গ্রামবাসীর বিরোধ বাধে ফজরের সঙ্গে। এই বিরোধের জেরেই খুন হোন সানজব। তার এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে শোকে কাতর এলাকাবাসী।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ বদরউদ্দিন বলেন, ফজর ও তার বাহিনী সরকারি হাইল হাওরের বিভিন্ন জলাভূমি ভোগদখল করে আসছে। এলাকায় তার লোকজন সবসময় ত্রাস সৃষ্টি করে রাখে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
বয়োবৃদ্ধ হাজী আরফিন, সামসুদ্দিন মাস্টার এবং সায়েদ আলীও এ কথার সমর্থন দিয়ে বলেন, চাঁদাবাজি, বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাৎ, কবরস্থানের সম্পদ লুটপাটসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ফজর ও তার গুণ্ডা বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শী দিলিছ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার সময় আমি সানজব ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বিবাদী শিফিল মিয়া আমার মাথার বাম পাশে দায়ের কোপ বসায়। আমি রক্তাক্ত অবস্থায় পালিয়ে আসি। মাথায় পাঁচটি সেলাই লেগেছে।
মামলার বাদী মিন্নত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ফজর হাজীপুরে এতোদিন চরম আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছিল। সে জমি-বিলের অবৈধ দখলকারী, চাঁদাবাজ এবং চোর-ডাকাতদের গডফাদার। আমার নির্দোষ বড়ভাইকে সে হত্যা করেছে।
নিহত সানজবের বাবা এবং এলাকার শতবর্ষী বৃদ্ধ হাজী মছদ্দর আলী বাংলানিউজকে আক্ষেপের কণ্ঠে বলেন, বাবারে, সানজবের বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন না কেন?
সানজব আলী দীর্ঘদিন দুবাই ছিলেন। আট বছর আগে দেশে ফিরে তিনি পারিবারিক মৎস্যখামার দেখাশোনা করতো। তার চার মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে বিবাহিতা। স্কুলপড়ুয়া তিন মেয়েসহ তার স্ত্রী এখন শোকে পাথর। মেয়েদের মধ্যে ফেরদৌসী আক্তার ১০ম শ্রেণিতে, জলি আক্তার ৮ম শ্রেণিতে এবং তুলি আক্তার ৭ম শ্রেণিতে স্থানীয় স্কুলে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
বিবিবি/আরআর/বিএস