হাতে রঙতুলি। তার আঁচড়ে আঁচড়ে আলপনার মুগ্ধতা ছড়াচ্ছিলেন পিচঢালা সড়কে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে নিজ শহর ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সামনের সড়কে চলছিলো তুলির টানে টানে আলপনার রঙ ছড়ানো। অনেকের সঙ্গে ছিলেন এই গুনী অভিনেত্রীও।
বললেন, লাল মানেই শক্তি আর সাদা মানেই শান্তি। তাই রাতেই লাল-সাদায় সেজেছি।
সেখানে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ আঁকিয়ে। তাদের তুলিতে উঠে আসছিলো মাছ, শঙ্খলতা, পানসহ নানা লোকজ নকশা।
নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে টাউন হল মোড় পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ হাজার বর্গফুট সড়কজুড়ে দৃষ্টিনন্দন আলপনা নতুন বছরের প্রথম দিনেই স্বাগত জানাবে ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দাদের।
চৈত্র সংক্রান্তির একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) ময়মনসিংহে আসেন জ্যোতি। এদিন নগরীর টাউন হলে চৈত্র সংক্রান্তির আলপনা আঁকার অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়ও দেখা যায় তাকে।
এরপর রাতেই দেখা যায় রঙ তুলি হাতে সড়কে।
জানালেন, ছেলেবেলা থেকেই আলপনা আঁকেন জ্যোতি। সেই সময় বিয়ে বা পূজোতে চালের গুঁড়া ছিটিয়ে অথবা ছড়ানো চালের গুঁড়ার আস্তরণের ওপর দাগ কেটে তৈরি করতেন আলপনা।
তবে ওই আলপনার সঙ্গে এখনকার আঁকা আলপনার ফারাক অনেক।
জ্যোতি বলছিলেন, এখন বিচিত্র রঙের ছোঁয়ায় আলপনা আঁকা হয়। সূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় উৎসবের সব রঙ।
আলপনা আঁকার ফাঁকে অনবরত সেলফি তুলে যাচ্ছিলেন। এ সময় উৎসাহী একজনের কথায় জ্যোতি উত্তর দিলেন- ছবি না থাকলে আলপনার স্মৃতি থাকবে কীভাবে?
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মেয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি। নগরীর আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেন।
সে সময়েই ঢুকে পড়েন ময়মনসিংহের স্বনামধন্য বহুরূপী থিয়েটারে। ধীরে ধীরে অভিনয় জগতের বাসিন্দা হয়ে ওঠেন।
চলচ্চিত্রের কাজে অবস্থান করছিলেন কলকাতায়। কিন্তু নিজের দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতেই চলে এসেছেন জ্যোতি। তার ভাষ্যে- ‘আমার দেশের হাওয়া, জল, সুর, প্রিয় মুখ, চেনা অচেনা মুখের ভীড়, মেলা, বাঁশি, লাল-সাদা রং, মঙল শোভাযাত্রা-এসব ছেড়ে দূরে থাকা যায়না!
তার ওপর নিজের শহরেই আলপনা আঁকছি, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি, পরিবার-পরিজনকে পাশে পাচ্ছি এটা বাড়তি আনন্দের।
বাংলানিউজকে জ্যোতি বলেন, ইচ্ছে ছিল সারা রাত আলপনা আঁকার। কিন্তু পরদিন পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকাতে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে। এ কারণেই রাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে।
আমুদে স্বভাবের জ্যোতি জানালেন, বাঙালির শেকড় খোঁজার দিনটিতে উৎসব আনন্দেই মেতে থাকবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় ০৪৪৫ ঘন্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
এমএএএম/এমএমকে