ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মার তপ্ত বালুরাশিতে বর্ষবরণের উচ্ছ্বাস

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
পদ্মার তপ্ত বালুরাশিতে বর্ষবরণের উচ্ছ্বাস বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে মানুষের ঢল। ছবি-সৌরভ হোসেন

রাজশাহী: ‘বহুদিন পর এবার ছুটির আমেজে বর্ষবরণ করলাম। বৃহস্পতিবার অফিস করে রাজশাহী এসেছি। শুক্র ও শনিবার টানা দু’দিনের ছুটি। ফলে উৎসবের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়াতে পারছি। নদীর পাড়ে এসে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।

মনে হচ্ছে ইশ্ যদি প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের সময় এমনভাবে ছুটি থাকতো’।  

রাজশাহী পদ্মার পাড়ে বেড়াতে এসে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানী ঢাকার ওয়াশায় কর্মরত আবদুল্লাহ আল-মামুন নামের এক সরকারি চাকরিজীবী।

চাকরির সুবাদে এতদিন ঢাকাতেই বর্ষবরণ করতে হতো তাকে। এবার পহেলা বৈশাখে পর পর দু’দিন সরকারি ছুটি পেয়ে রাজশাহী চলে এসেছেন। আর সবার সঙ্গে বর্ষবরণের আনন্দ যে, কতটা মধুর তারই কথা বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন মামুন।

বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে মানুষের ঢল।  ছবি-সৌরভ হোসেনতবে কেবল মামুনই নয়, রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে এমন হাজারো মামুন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন রাজশাহীতে। যেমনট ঈদের ছুটিতে আনন্দ করতে আসতেন। তেমনি এবার বর্ষবরণ করতে এসেছেন। ফলে বৈশাখের তীব্র তাপপ্রবাহ এমন বিনোদন প্রেমীদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি।

তাই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বিনোদন পিপাসুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছিল রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড়। শিশু, তরুণ-তরুণী আর পৌঢ়দের ঢল নেমেছিল পদ্মার তপ্ত বালুরাশিতে।

রাজশাহী মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত বিনোদন প্রেমী মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মত। নগরী জুড়ে আজ পুরোদমে ছুটির আমেজ চলছে। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরেই ছিল পদ্মার পাড়।

বিনোদনের জন্য ছুটে আসা মানুষদের কারণে পদ্মা পাড়ের চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের খাবার দোকানগুলোর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি চলবে তাদের।

ভরা নদীর সেই রূপ নেই। তাতে কী মুক্ত বাতাসের খোঁজে বিকেল থেকে নদীর চরেই নেমে পড়েন সবাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কেউ চরে ঘুরে বেড়ান। কেউ আবার নদীর পাড়ে বসেই বন্ধু-বন্ধব নিয়ে আড্ডা দেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিড় ছিল। পরে বিকেল থেকে আবার শুরু হয় মানুষের কোলাহল। বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে মানুষের ঢল।  ছবি-সৌরভ হোসেন

মহানগরীর বড়কুঠি পদ্মার পাড় ও বিজিবি’র সীমান্ত অবকাশ নোঙ্গর এলাকায় শিশু সন্তানদের নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে অনেকেই অনেকভাবে জানান তাদের আনন্দ অনুভূতির কথা।

বাবা শফিক আহমেদের সঙ্গে সীমান্ত অবকাশে বেড়াতে আসা চার বছরের ছোট্ট মেয়ে সিফাত আরা জানায় নদীর ধারে বেড়াতে এসে তার ভীষণ ভালো লাগছে। সে ফুচকা খেয়েছে, পেয়ারা খেয়েছে। কিনেছে বেলুনও। এখ‍ানে আসার পর তার কাছে বর্ষবরণের আনন্দ যেন দ্বিগুণ মনে হয়েছে।    

মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকা থেকে আসা ফারহান, জাবেদ ও আফতাব জানান তারা সবাই বন্ধু। চারিদিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে। কিন্তু সব কিছুর চেয়ে পদ্মা নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নির্মল বাতাস তাদের বেশি ভালো লাগে। যেজন্য সময় পেলেই তারা পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসেন। এছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বেশি লোকজন হওয়ায সেখানে আরও বেশি আনন্দ হয় বলেও জানান তারা।

এদিকে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পদ্মাপাড়ে আজ আবীর ও ফুলের প্রীতিবন্ধনীর পাশাপাশি চলেছে নাচ ও গানের আয়োজনও। নগরীর ফুদকিপাড়া উন্মুক্ত মঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে এসব অনুষ্ঠান চলছে। দিনটি উপলক্ষে তাই সকাল থেকে তারুণ্যের ঢল নেমেছে বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে ও টি-বাঁধ এলাকায়।

বাংলাদেশ সময়:০৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭

এসএস/আরএ



 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।