এ উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে শহরের রাজগুরু ক্যাং থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে উজানী পাড়ার সাঙ্গু নদীর তীরে পৌঁছে।
এসময় শোভাযাত্রায় অংশ নেন, বুদ্ধ ধাতু জাদির প্রতিষ্ঠাতা বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উপঞঞা জোত থেরো (উ চ হ্লা ভান্তে), পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী প্রমুখ।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজারো বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
বুধবার (১২ এপ্রিল) থেকে মারমা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পঞ্চশীল ও অষ্টশীল ধারণকারী উপষদরা তিনদিনের জন্যে বৌদ্ধ ক্যাং এ বসবাস শুরু করেন এবং ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে পুরাতন বছরকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বুদ্ধমূর্তি স্নান করানোর মধ্য দিয়ে। তাছাড়া সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় বর্ষ বিদায়লগ্নে এবং নতুন বছরের প্রারম্ভে মারমা সমাজে বয়স্ক স্নান, প্রবীণ পুজা, উপষদ গ্রহণ, শীল গ্রহণ, এবং বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে বিহারে অবস্থানকারী উপষদ এবং ভিক্ষুদের জন্যে মারমা তরুণ-তরুণীরা রাত জেগে পিঠা তৈরি করে এবং ভোরে তা বিহারে বিহারে নিয়ে গিয়ে প্রবীণদের মিষ্টি মুখ করানো হয়।
এবারও শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) অপরাহ্নে বান্দরবান শহরের রাজগুরু ক্যাং থেকে প্রধান মূর্তিগুলোকে মাথায় চড়িয়ে ধর্মীয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের উজানি পাড়ার সাঙ্গু নদীর তীরে।
এসময় বৌদ্ধ ভিক্ষু, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী নারী-পুরুষ দল বেধে ভিড় জমান নদীর ঘাটে। আনুষ্ঠানিক প্রার্থনার পর মূর্তিগুলোকে চন্দন মিশ্রিত পানিতে স্নান করানো হয়। তাছাড়া সারা বছরের গ্লানি ও অকল্যাণকে ধুয়ে মুছে দিতে স্নানে ব্যবহৃত পানি বোতল ভরে বাড়িতে নিয়ে যায় অনুসারীরা। পরে মূর্তিগুলোকে মাথায় চেপে আবার রাজগুরু ক্যাং এ নিয়ে যাওয়া হয়।
বিকেলে বুদ্ধমূর্তি স্নানের প্রাক্কালে বিশেষ প্রার্থনায় বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু বুদ্ধ ধাতু জাদির প্রতিষ্ঠাতা উ প ঞ ঞা জোত থেরো (উ চ হ্লা ভান্তে) বলেন, নতুন বছরের প্রারম্ভে বুদ্ধমূর্তি স্নান করানোর রীতি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তারই ধারাবাহিকতায় বান্দরবানেও বুদ্ধমূর্তি স্নান উৎসব গত কয়েক যুগ থেকে চলে আসছে। বুদ্ধমূর্তি স্নানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণীর হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সাঙ্গু নদীর তীর। এতে ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি সম্প্রীতির মেলবন্ধনও রচিত হয়।
সাংগ্রাই উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লা গ্য চিং মার্মা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরের মত এবারও মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে। এটি মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও জেলার বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের অংশগ্রহণে তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উৎসবের মাধ্যমে বান্দরবানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এটাই আমাদের কাম্য।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে রাজার মাঠে অন্যতম আকর্ষণ মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে মেতে উঠবে মার্মা তরুণ-তরুণীরা।
রোববার (১৬ এপ্রিল) বৌদ্ধ মন্দিরে যাত্রা, শীল গ্রহণ ও ধর্ম দেশনা শ্রবণের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের এ উৎসবের ইতি টানা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৬ ঘণ্টা, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ