উৎসব আর আনন্দে মেতে থাকে এলাকার পাড়া মহল্লায় ছোট থেকে বুড়ো। তবে কিছু এলাকায় বৈশাখ মাস এলেও আসে না বৈশাখী উৎসব।
দিনের আলো উজ্জ্বল হওয়ার আগেই প্রতিদিন বসে শ্রমের হাট। এখানে মাছ ,মাংস, কিংবা সবজির হাট বসে না এখানে বসে মানুষের হাট। কাজের সন্ধানে আসা মানুষগুলো সারি সারি বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ধর কষাকষি অতঃপর কয়েক ঘণ্টার জন্য বিক্রি। আবার নতুন ভোরে হাজির হয় আগের স্থানেই। যাদের প্রতিটি ভোর হয় কাজের সন্ধানে সেখানে পহেলা বৈশাখ শব্দটাই বেমানান।
আশুলিয়ায় ৭টি স্থানে বসে এ ধরনের শ্রমের হাট। ফজরের নামাজের পর থেকে আশুলিয়ার জিরানী, ডিইপিজেড, বাইপাইল, জামগড়া, জিরাবো, আশুলিয়া বাজার, নবীনগর এলাকায় প্রায় কয়েক হাজার মানুষ কাজের সন্ধানে ভিড় জমায়।
৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের ধরণ অনুযায়ী বাড়তে থাকে টাকার পরিমাণ। নারী-পুরুষের এ মিলন মেলায় আনন্দের চেয়ে খেটে খাওয়া মানুষের হতাশা আর কষ্টের চিহ্ন সুস্পষ্ট।
নাটোরের মোহাম্মদ আলী দুই ছেলে মেয়েকে রেখে দীর্ঘ তিন বছর ধরে আশুলিয়া পরে রয়েছেন। কাজের সন্ধানে ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজির হয় কয়েক ঘণ্টার মালিকের জন্য।
তিনি বলেন, ‘বড় লোকরা পান্তা ভাত, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ খায় শখ কইরা। আমরা খাই ঠেলায় পইরা। আমাগো পইলা দিন প্রত্যেকদিন হয়’।
মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে আরও বলেন, বাড়িতে ছেলে মেয়ে দুইটা আমার জন্য অপেক্ষা করে। তাগো শখ জাগে নতুন জামা কাপড় পইরা ঘুরতে। কিন্তু আমাগো সামর্থ্য নাই। ভোর হলেই চইলা আসি কাজ শেষ করে বাসায় যায়। দিন শেষে ৩৫০ টাকা পাইলেও বাসায় ঢুকার আগেই শেষ হয়ে যায়। তারপর ছেলেমেয়েগো পড়াশোনার খরচ চালাইতে হয়। পহেলা বৈশাখ আমাগের জন্য নয়, বড় লোকগের জন্য।
সোলেখা নামের এক নারী দিনমুজর বলেন, স্বামী ফেলে রেখে চলে গেছে, তিন সন্তান নিয়ে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়ে দুই বছর ধরে পেটের দায়ে দিনমুজরের কাজ করতেছি। কবে ঘরে একটু ভাল করে সবাই মিলে খেতে পারছি মনে নেই। পহেলা বৈশাখে আমাদের কেউ ১০ টাকা বেশি দিব না। আমাদের মত মানুষদের বৈশাখ মাস আসে না বার মাসই চৈত্র মাস। ঠিক মত দুই বেলা খেতে পারলেই আমাগো ঈদ মনে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৪ ঘণ্টা, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ