ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আগে ছিল বাঙলা ঢোল, এখন হয়েছে রিমিক্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
আগে ছিল বাঙলা ঢোল, এখন হয়েছে রিমিক্স বাউল আবুল কালাম

সিলেট: ঝাঁকড়া কালো চুলের অধিকারী বাউল আবুল কালাম। যার রক্তে মিশে আছে বাউল গান। মধুর কন্ঠের অধিকারী এই বাউলের গানের হাতেখঁড়ি ১২ বছর বয়সে। গান গাইতে গাইতেই গায়েন হয়ে ওঠেন তিনি। এখন তারা পেশা ও নেশায় বাউল গান। নিজেই লেখেন, সুরও করেন নিজেই। তিনি বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত একজন শিল্পী।

শুধু গানই নয়-বাদ্যযন্ত্রেও রয়েছে তাঁর মুন্সিয়ানা। বাঁশি, হারমোনিয়াম, বেহালা, ঢোল, মন্দিরা, ডপকি–সবই শিখেছেন তিনি।

ধীরে ধীরে নিজেকে স্বয়ং সস্পূর্ণ বাউল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে সন্তানদেরও তিনি শিখিয়েছেন বাউল গান  শিখিয়েছেন বাদ্যযন্ত্র বাজানো। গানের ভুবনে চার উত্তরসূরী রয়েছে আবুল কালামের।

তাঁর বড় মেয়ে বাউল শিল্পী রহিমা রুহি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করেন। মেঝো ছেলে ইমন ঢোল বাদক, আরেক ছেলে মন্দিরাতে সিদ্ধহস্ত এবং ছোট মেয়ে ছয় বছরের রিমা রুমী এই বয়সেই বাবার সঙ্গে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলায়। আপাদ মস্তক এক বাউল পরিবার কালামের। যে সংসারে উপার্জন একমাত্র গান করে।

বাংলানিউজের সঙ্গে বর্ষবরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাউল গানের তফাৎ তুলে ধরে বাউল আবুল কালাম বলেন, আগে বাংলার ঢোল, বেহালা, হারমোনিয়াম দিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে গান গাইতাম। এখন বাদ্যযন্ত্রে অনেক সংযোজন হয়েছে। গানেও এসেছে পরিবর্তন। বাউল গানের মূল ধারা থেকে সরে আসছি আমরা। এখন বাউলগান হচ্ছে রিমিক্স।

তিনি বলেন, আগে বর্ষ বরণে খালি গলায় গান করতাম। বাউল গান হতো-মালজোড়া, মারফতি, দেহতত্ত্ব। গ্রামে-গঞ্জের স্কুলে গিয়ে গান গাইতাম।

৯০ দশকে বা তারও আগে অবাধে বৈশাখী আয়োজন হতো না। যেমনটি এখন হচ্ছে। তখন বাউল শিল্পীরা ছিলেন হাতেগোনা, অনুষ্ঠান হতো কম। এখন অনুষ্ঠান যেমন বেড়েছে, তেমনি শিল্পীও। তখন বাউল শিল্পী দেখলে মানুষ সম্মান করতো। বাউলদের অনুকরণে মাথার চুল লম্বা রাখতো। ডিজিটালের এই যুগে প্রকৃত বাউলদের মূল্যায়ন কমে গেছে।

সত্যিকারের বাউল গান উপভোগ করা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম যে ধরনের গানই হোক না কেন, উত্তেজনা-উন্মাদনা ছড়ানো গান চায়, বললেন কালাম।

অথচ বাউল গান হলো আমাদের প্রকৃত সংস্কৃতি। বাউল গানে মিশে আছে মাটি ও মানুষের কথা।


মনের তাগিদ থেকে মানুষকে সত্যিকারের বাউলগান উপহার দিতে সন্তানকে নিজের মতো করে তৈরি করেছেন তিনি। তবে এই বন্দুর পথ পাড়ি দেওয়া সুখকর ছিলো না। সম্প্রতি জঙ্গিবাদ বিরোধী একটি অনুষ্ঠানেও সন্তানদের নিয়ে গান করেছেন তিনি।

ওস্তাদ বাউল সম্রাট ক্বারী আমির উদ্দিন ও বাউল ফিরোজ মিয়ার কাছে গান রপ্ত করেন তিনি। আগের বাউলরা চলতেন সাদা সিদে ভাবে, মগ্ন থাকতেন ধ্যানে। পোষাক পরিচ্ছদেও ছিলো বাউলিয়ানা, বলেন তিনি।

১৯৭০ সালে নগরীর কলাপাড়া ডহর এলাকায় জন্ম কালামের। জন্ম থেকেই সিলেটে বসবাস। তাঁর বাবা মরহুম দুদু মিয়া-মা নূর জাহান বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বারোবাজারে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ১৯৯৬ সালে বি.বাড়িয়ার শাহাতি এলাকার দুদু মিয়ার মেয়ে ফাতেমা বেগম রুনার সঙ্গে প্রণয় হয়।

চার সন্তানের জনক বাউল কালাম নিজেন গান করার পাশাপাশি বাউল সম্রাট শাহ করিম, ফকিরনদুরবিন শাহ, রাধারমন, হাছনরাজাসহ বিভিন্ন গুনী বাউলদের গান করেন। তার প্রত্যাশা এসব গুণি শিল্পীর গান তাদের সুর-তাল-লয় ঠিক থাকুক আজীবন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৬৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭

এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।