ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন

সিরাজগঞ্জ: গেলো বছর বাড়ি ভাইঙ্গা গেছে। ওয়াপদার পাশে অন্যের জমি ভাড়া নিয়্যা কুনোমতে বাড়ি কইর‌্যা বসবাস কইরত্যাছি। কিন্তু চৈতমাসেই যেভাবে নদীভাঙা শুরু অইছে, বর্ষাকাল আসার আগেই এই বাড়িডাও ভাইঙা যাইবো। নদীর তীর বাইন্ধ্যা দিলে আমাগোর এ অবস্থা অইতো না। এহন আমরা রিলিফ চাই না, সরকারের কাছে দাবি, নদী বাইন্ধ্যা দেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা গ্রামের রাবিয়া খাতুন সরকারের কাছে তার আর্তি জানালেন এভাবেই।

এ গ্রামের শতবর্ষী কৃষক আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, বাপ-দাদার বাড়িসহ ১৫ বিঘা সম্পত্তি এই নদীর পেটে গ্যাছে।

আর গেলো ১০ বছর ধইর‌্যাই বিভিন্নজনের জমি ভাড়া নিয়্যা বাড়ি তুইল্যা বসবাস করত্যাছি। এইসব বাড়িও প্রতিবছরই ভাইঙা যায়।

একইভাবে নিজ নিজ দুঃখ-দুর্দশার বিবরণ দেন শুভগাছার গোলাম হোসেন, শাহার বানু, তোতা মিয়া, রুবিয়া বেগম, চর বাহুকার ময়দান আলী, রেজা, বাহুকার সফর আলী ও আনোয়ারুলসহ যমুনাপাড়ের অসংখ্য মানুষ।

শুভগাছার মৎস্যজীবী তোতা মিয়া বলেন, বাপের ১২ বিঘা জমি আগেই খাইয়্যা নিছে যমুনা। বাপের জমি হারাইয়্যা কৃষিকাজ বাদ দিয়্যা মাছ ধইর‌্যা জীবন চালাইত্যাম। সামান্য একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই আছিল। গেলো এক সপ্তাহের মধ্যে সেইটাও ভাইঙা গেলো। এহন আমি নিঃস্ব হইয়্যা গেছি।

রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন

শনিবার (১৫ এপ্রিল) রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা, চরবাহুকা, টুটলের মোড়, কাজিপুরের শুভগাছা এলাকা ঘুরে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিমলা-খুদবান্দি নদী সংরক্ষণ বাঁধের বাহুকা, টুটল মোড়, শুভগাছা ও চর বাহুকা এলাকায় গত ১৫ দিনে শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর বিগত তিনমাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তিন শতাধিক বাড়ি-ঘর বিলীন হয়েছে। চর বাহুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো গ্রামটি এখন ইতিহাস।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গেলো দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। তবুও টনক নড়ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের। স্থায়ী ব্যবস্থা তো দূরের কথা ভাঙন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।

রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন

ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষুব্ধ জনগণ আরও জানান, কয়েকজন মন্ত্রী নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এখনও সেটি আলোর মুখ দেখছে না।

পল্লী চিকিৎসক মো. আলম খায়ের বলেন, এ ১৫ দিনেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো চর বাহুকা গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে চোরমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাহুকা মসজিদসহ টুটলমোড়, বাহুকা, শুভগাছা গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার।

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো মুহূর্তে সিমলা-খুদবান্ধি মাটির বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। এতে রতনকান্দি, শুভগাছা ও বাগবাটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

রিলিফ চাই না, নদী বাইন্ধা দেন

রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য এলাকায় নদীভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও অবহেলিত এ অঞ্চলে কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না। ফলে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু পরিদর্শন করেই চলে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিত বুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, বাহুকা থেকে খুদবান্দি ও কাজিপুরের মেঘাই এলাকা মিলে আট কিলোমিটার নদী তীররক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে স্থানীয় জনগণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বাংলানিউজকে জানান, ওই এলাকার তাৎক্ষণিক ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আট কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৬৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প এরই মধ্যে প্রি-একনেকে অনুমোদিত হয়ে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।