ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হাসি-কান্নায় শেষ হলো দুই বাংলার মিলন মেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
হাসি-কান্নায় শেষ হলো দুই বাংলার মিলন মেলা দুই বাংলার মিলন মেলা-ছবি: বাংলানিউজ

ঠাকুরগাঁও: সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশ পরিণত হয়েছে দুই বাংলার লাখো মানুষের মিলন মেলায়।

প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শনিবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশের ঠাকরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তের ৩৭৪ পিলার এলাকা এবং ওপারের ধর্মগড়ের সীমান্তবর্তী ৩৭৩ নম্বর পিলার এলাকা, হরিপুরের ৩৭২ নম্বর পিলার ও ডাবরি সীমান্তের ৩৬৯ নম্বর পিলার এলাকায় নাগর নদীর পাড়ে লাখো মানুষের ঢল নামে।  

কাঁটাতারের দু’পাশে দুই বাংলার অসংখ্য মানুষ তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

মা মেয়েকে, ভাই ভাইকে, বাবা ছেলেকে, নাতি-নাতনিদের কাছে পেয়ে সীমান্ত এলাকা হাসি-কান্নায় ভরে ওঠে। একদিকে দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনদের এক নজর দেখার সুযোগ, অন্যদিকে বিদায়ের সুর। এসময় পাশাপাশি কথা বলার সুযোগ ও উপহার বিনিময় হলেও কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে না পারেনি।
 
লতা রাণী (৫৫)। তিনি নাটোর থেকে এসেছেন ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় থাকা মেয়ে, নাতি ও জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। কথা হয়েছে, দেখাও হয়েছে। কিন্তু মা মেয়েকে একটু বুকে জড়িয়ে আদর করতে না পেরে চাপা কষ্টটা রয়ে গেছে।
 
দিনাজপুরের আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, এক রক্ত, এক বংশ তবুও আলাদা। নিজের মানুষকে দেখবো, কথা বলবো তাতেও জটিলতা। এভাবে কি শান্তি পাওয়া যায়। এটা কেন সহজ করা হয় না?

প্রিয়জনের জন্য আনা উপহার সামগ্রী কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে ছুড়ে দিতে হয়। এতে একজনের উপহার চলে যায় অন্যের হাতে। তাই তাদের দাবি, দুই দেশের সরকার এতো কিছু সমঝোতা ও বিনিময় স্মারকে চুক্তি স্বাক্ষর করছে। সেই সঙ্গে একদিনের জন্য কাঁটাতারের বেড়ার গেট দিয়ে সহজে উপহার বিনিময়ের ব্যবস্থা করে দিলে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একমত হয়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে দুই দেশের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কথা ও দেখা করার ব্যবস্থা করেছে।

শনিবার এখানে হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। নামে বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রস্তুতি না থাকায় সবাইকে ভিজতে হয়েছে। এতে বৃষ্টি আর চোখের পানি একাকার হয়ে যায়। ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষ আলাপ চালাতে থাকে।

রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইনুল হক মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত ছিল। এ কারণে দেশ বিভক্তির পর আত্মীয়-স্বজনরা দু’দেশে বসবাস করছেন। সারা বছর কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারে না। তাই এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
আরবি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।