সাপ আর বেজির খেলা দেখাতে গাজীপুর থেকে এসেছেন বগুড়ায়। সাপ-বেজি নিয়ে মঞ্চে হাজির তিনি।
পাশেই তিনটি ছোট-বড় ঝাঁপি। প্রত্যেক ঝাঁপিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। কোনো কোনোটি আবার অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ঝাঁপির ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে এলো বড় আকৃতির দাঁড়াশ ও গোখরো। ফস ফস শব্দ করতেই চারপাশ ঘিরে ধরা দর্শকরা মুহূর্তে সাপুড়ের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলেন।
এরপর শুরু হলো দুই আজন্ম শত্রু সাপ আর বেজির মহারণ। মাখন বাইদের বীণার তালেতালে ঝাঁপি থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে বিষধর সব সাপ। চলতে থাকে সাপ-বেজির আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ।
বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বগুড়া থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে পাঁচদিনব্যাপী বৈশাখী মেলার। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ এ মেলার উদ্বোধন করা হয়।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। এই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় গ্রাম বাঙলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহনকারী সাপ-বেজির খেলা।
ব্যতিক্রমী এ খেলা উপভোগ করতে দুপুরের পর থেকেই মেলাপ্রাঙ্গণে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেল হওয়া মাত্র মানুষে মানুষে ভরে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ।
খেলা শুরুর আগেই মঞ্চের চারপাশে অবস্থান নেন উৎসুক মানুষ। সাপুড়ের বীণার সুর কানে পৌঁছতেই মেলায় আসা বাকি লোকজনও খেলা দেখতে মঞ্চের দিকে ছুটে আসেন। মাখন বাইদে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আক্রমণ ঠেকাতে কখনো সাপ আবার কখনো বেজিকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু বেজির ক্রমাগত আক্রমণে সাপের তখন বারোটা বেজে গেছে। এভাবে সাপ বেজির লড়াইয়ে প্রাণ যায় সাপের।
আবু রায়হান, জাহাঙ্গীর আলম, ওমর আলীসহ একাধিক দর্শক বাংলানিউজকে বলেন, সাপ আর বেজির লড়াইটা সত্যি অসাধারণ ছিল। এর আগে বাস্তবে দেখার সুযোগ হয়নি; এবার হলো। গ্রাম বাঙলার ঐতিহ্যবাহী সাপ-বেজির লড়াই নিজ চোখে দেখার সুযোগ করে দেওয়ায় দর্শকরা আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
বগুড়া থিয়েটারের সিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালির সংস্কৃতির ভান্ডার বিশাল। এর মধ্যে গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ বিভিন্ন খেলাধুলা কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা পাঁচ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম