ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সুপারশপ আগোরার ঠকবাজির নমুনা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
সুপারশপ আগোরার ঠকবাজির নমুনা! সুপারশপ আগোরার রাজধানীর সেগুনবাগিচা শাখা। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সাধারণ বাজারে ব্রয়লারের মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা। তারা প্রতিকেজি বিক্রি করছে ২৪৮ থেকে ২৭৫ টাকা। নাড়িভুড়ি বাদ দিয়ে চামড়াসহ রাখছে ২৪৮ টাকা প্রতিকেজি, চামড়াও না দিলে রাখছে ২৭৫ টাকা প্রতিকেজি। অর্থাৎ নাড়ি-ভুড়ি না দেওয়ার কারণে সাধারণ বাজারের সঙ্গে তাদের দামের তফাৎ ১০০-১২৫ টাকা।

সাধারণ বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিকেজি মুরগিতে পাখা ও নাড়ি-ভুড়ি থাকে সর্বোচ্চ ৩০০ গ্রাম। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? সাধারণ বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে যদি প্রথম ৭০০ গ্রাম মুরগির দাম তারা ১৫০ টাকাই রাখে, বাকি ৩০০ গ্রাম মুরগির জন্য তারা দাম রাখছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা!

‘নাড়ি-ভুড়ি’ না দেওয়ার এই ‘অপকৌশলটা’কে হাতিয়ার বানিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে এভাবেই ঠকবাজি চালিয়ে যাচ্ছে সুপারশপ আগোরা! ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের এই প্রতারণার বিষয়টি বোঝা গেল শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আগোরার সুপারশপে গিয়ে।

অথচ কী অগাধ বিশ্বাসে নির্ভেজাল ও তাজা বাজারের জন্য ক্রেতারা দ্বারস্থ হচ্ছেন আগোরার। এমন আক্ষেপটা ঝরলো এক ক্রেতার কণ্ঠে। তিনি বলছিলেন, নতুন নতুন অজুহাত ও স্কিমে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের পকেট কাটছে সুপার শপটি। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রাজধানীর যে কোনো বাজার থেকে বেশি টাকায় বিক্রি করছে আগোরা কর্তৃপক্ষ। নতুন নতুন অজুহাত ও স্কিমে পণ্য বিক্রি করে বলে ক্রেতারাও তাদের ঠকবাজি বুঝতে পারছেন না।
 
ওই ক্রেতা অভিযোগ করেন, ৩-৪ দিনের আগের মাংস-সবজি ‘ফ্রেশ’ বলে চালিয়ে দেওয়ার মতোও জালিয়াতি করছে আগোরা।

আগোরার শপে গিয়ে সেখানকার বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি চামড়াসহ ২৪৮ টাকা ও চামড়া ছাড়া ২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাদের মুরগিতে পাখা-নাড়িভুড়ি রাখা হয় না। আর প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯৫ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৩০ টাকায়।
 
অপকৌশল বুঝতে পেরেও সরাসরি জানতে চাওয়া হয় এক বিক্রয়কর্মীর কাছে-ব্রয়লার মুরগি চামড়া ও চামড়া ছাড়া এতো টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে কেন? ওই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পাখা ও নাড়ি-ভুড়ি ছাড়া ওজন করে মুরগির মাংস বিক্রি করি। তাই আগোরার মুরগির মাংসের দাম অন্য সব বাজার থেকে বেশি।
 
সেগুনবাগিচার বিজয়নগর সংলগ্ন সাধারণ বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাখা ও নাড়ি-ভুড়িসহ ওজন করে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
জবাই করার পর এককেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগির পাখা ও নাড়ি-ভুড়ি বাদ দিয়ে কতোটুকু হয়- জানতে চাইলে রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারের বিক্রেতা সেলিম মিয়া বলেন, প্রতিকেজিতে প্রায় ৭০০ গ্রাম মাংস থাকে। নাড়ি-ভুড়ির ওজন পড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ গ্রাম।
 
বোঝাই গেল, এই নাড়ি-ভুড়ির বদলে সেখানে ৩০০ গ্রাম মাংস দিয়ে আগোরা কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছে ১০০-১২৫ টাকা!

কেবল ব্রয়লার মুরগি নয়, অন্য মাংসের ক্ষেত্রেও সাধারণ বাজার ও আগোরার দামে তফাৎ লক্ষ্য করা গেল। কারওয়ান বাজারে ক্রেতাদের সামনে খাসি জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকা প্রতিকেজি। আগোরায় প্যাকেট করা খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৩০ টাকা প্রতিকেজি। এছাড়া, সাধারণ বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়, আগোরা বিক্রি করছে ৪৯৫ টাকা প্রতিকেজি।

শাক-সবজি, ডাল-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেও সাধারণ বাজারের চেয়ে উর্ধ্বমুখী দেখা গেল আগোরার দাম। যেমন বেগুন সাধারণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা প্রতিকেজি, আগোরায় ৫০ টাকা; দেশি পেঁয়াজ সাধারণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা প্রতিকেজি, আগোরায় ৩৫ টাকা; ভারতীয় পেঁয়াজ সাধারণ বাজারে ২৫ টাকায়, আগোরায় ৩০ টাকা; তেলাপিয়া মাছ সাধারণ বাজারে ১৩০ টাকায়, আগোরা ১৭০ টাকায় এবং রুই মাছ সাধারণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩০০ টাকা প্রতিকেজি, আগোরা রাখছে ৩৮০-৪৫০ টাকা প্রতিকেজি।   

ওই ক্রেতার প্রশ্ন, ‘ফ্রেশ’ দেওয়ার নাম করে আগোরা আর কতোদিন এভাবে ‘ফ্রেশ ঠকবাজি’ করবে সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে!

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।