প্রথমেই তারা ছুটলেন কুমিল্লার কুল্লা পাথর। সেখানে গিয়ে দেখলেন, একই সমাধিস্থলে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- চার ধর্মের মানুষ শুয়ে আছেন।
![মুক্তিযুদ্ধর সময়ের নৌকা: ছবি দীপু মালাকার](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/war-museum-(18)20170416085845.jpg)
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, স্থানীয় রাজনীতির কারণে এ কাজ করতে পারবেন না। তখন ডা. সারোয়ার আলী প্রস্তাব দিলেন, ‘চলেন আমরা একটি জাদুঘর করি’। শুরু হলো-মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের স্বপ্ন।
যা পূরণে ডা. সারওয়ার আলীর সঙ্গী হলেন- জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হক, আলী যাকের, সারা যাকের, কবি রবিউল হুসাইন ও আক্কু চৌধুরী। গঠন হলো একটি ট্রাস্টি বোর্ড। বোর্ডের সদস্য হলেন এই আট মুক্তিপাগল মানুষ।
কেটে গেল আরো চার বছর। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুন বাগিচায় ভাড়া করা একটি বাসায় যাত্রা শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। দ্বার উন্মুক্ত হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠানের, যেটির মূল লক্ষ্য জাতির গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করা; গড়ে তোলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করার মতো একটি প্রজন্ম।
কিন্তু ওই ভাড়া বাসায় আর কত দিন? বিকশিত মনের জানালা খোলার জন্য চাই বিস্তৃত পরিসর। তাই, শুরু হলো আপন ঠিকানা খোঁজার মিশন। একদিকে, চললো মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সংগ্রহ। অন্যদিকে, স্থায়ী একটা ঠিকানার জন্য অর্থ সংগ্রহ।
![মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের একটি অংশ: ছবি দীপু মালাকার](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/war-museum-(27)20170416085852.jpg)
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পাওয়া গেল এক একর জমির বরাদ্দপত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বুঝে পাওয়া গেল জমি। ২০১১ সালের ৪ মে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে। রোববার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টায় আবার তার হাতেই ভবনটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনে যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। জনসাধারণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারের দেওয়া তহবিল থেকে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে জাদুঘরের নয়তলা ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রায় এক একর জায়গার ওপর নির্মিত এই ভবনের ব্যবহারযোগ্য আয়তনের পরিমাণ এক লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট।
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনের জন্য নতুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে চারটি গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। যার প্রথমটিতে থাকছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সব সংগ্রহ। ওই সময়ের মধ্যে এই জনপদের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রত্ননিদর্শন। দ্বিতীয়টিতে থাকছে ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সব সংগ্রহ। থাকবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ঘটনা থেকে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় প্রবাসী সরকার গঠন পর্ব। শব্দ ও আলোর প্রক্ষেপণের একটি বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে এই গ্যালারিতে।
২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠবে এই গ্যালারিতে। এছাড়া সারা দেশের গণহত্যার নিদর্শনও থাকবে। তৃতীয় গ্যালারিতে থাকছে যুদ্ধচলাকালীন অর্থাৎ ১ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব স্মৃতি।
চতুর্থ গ্যালারিতে থাকছে বিজয় স্মৃতি। বাঙালির প্রতিরোধ গড়ে তোলার নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধ, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, গণমানুষের দুরাবস্থা, যৌথ বাহিনীর অভিযান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয়, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ঢাকায় পাকিস্তানি দখলদারদের আত্মসমর্পণসহ নানা চিত্র ক্রমান্বয়ে দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।
স্থপতি তানজিম হাসান সেলিমের নকশায় দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপত্যশৈলীর জাদুঘর ভবনটি ছাদের ওপর আর সামনের দেয়াল থেকে কামান-বন্দুকের নলের মতো নানা আকারের কংক্রিটের নল বেরিয়ে এসেছে। যা দূর থেকেই যে কারো চোখ কেড়ে নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
এজেড/এসআই