মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শিখা চির অম্লান প্রজ্জলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ছোট ছোট শিশুরা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
ব্যতিক্রমী স্থাপত্যশৈলীর নয় তলা জাদুঘর ভবনটি আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের উল্টো দিকে। প্রায় দুই বিঘা জায়গা জুড়ে নির্মিত ভবনের ব্যবহারযোগ্য আয়তন ১ লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট।
২০১১ সালের ৪ মে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতোদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি সেগুনবাগিচার একটি ছোট্ট দোতলা বাড়িতে ছিলো।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় অস্থায়ী ছাউনিতে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেনো জানতে পারে কত মহান ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ’
‘সেই স্মৃতি চিহ্নগুলো তারা দেখবে, উপলব্ধি করবে, অন্তরে ধারণ করবে, সেভাবে নিজেদের চরিত্রকে গঠন করবে এবং দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। ’
বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালনা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এজন্য বিত্তশালীসহ সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সারাদেশের গণকবর, মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা-উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করে দিচ্ছি। সেখানে ছোট পরিসরে হলেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থাকবে। এরইমধ্যে ১৭০টি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫’র পর এমন একটা সময় এসেছিলো আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এ কথা বলতে ভয় পেতো। ’
‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধারা গর্ব ভরে বলতে পারেন আমি মুক্তিযোদ্ধা। ’
শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের তার প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা বানিয়েছেন। সামরিক বাহিনীতে ১৯ ক্যু হয়েছে, শত শত অফিসারকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে, তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে পুর্নবাসন করেছে। যার ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া রাজাকার, আল-বদরদের মন্ত্রী বানিয়েছে।
দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সরকারের আন্তরিকতা, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের ভৌগলিক সীমারেখা ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে একেবারে কম না। এই জনশক্তিকে শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে, প্রযুক্তিতে উন্নত করতে চাই। ’
তিনি বলেন, ‘যাদের হাতে দেশ স্বাধীন হয়েছে তারা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের দ্বারা উন্নতি হয় না। ’
দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাঙালির সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
এমইউএম/জেডএস