ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘পাবলিক বুঝুক কত ধানে কত চাল!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
‘পাবলিক বুঝুক কত ধানে কত চাল!’ পরিবহন সংকটে ভোগান্তি নগরজুড়ে। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: ‘সব গাড়ি লোকাল বানাইছে, এখন পাবলিক বুঝুক, কত ধানে কত চাল?’ যাত্রীভর্তি বাস থাকার পরও অযথা এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে এভাবেই হুংকার ছাড়ছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরা হয়ে আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী ‘ভ‍ূইয়া পরিবহনের’ হেলপার সগির।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নগরীতে গণপরিবহনের কথিত ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধের পর সগিরের মতো এমনই অপতৎপরতায় লোকাল বাসের হেলপার-চালকেরা। যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে সময়ক্ষেপণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে যাত্রীদের।

এই অপতৎরতায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বলছেন, কথিত ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার পর বাসের হেলপার-চালকেরা ‘লোকাল’ হয়ে যাওয়ার দোহাই দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে ‘শিক্ষা’ দিচ্ছে। গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে এমনকি গাড়ির দরজায় পর্যন্ত ঝুলন্ত যাত্রী রেখেও স্টপেজ ছাড়া যেখানে-সেখানে বাস থামাচ্ছে তারা।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ থেকে উত্তরা যাওয়ার জন্য ‘ভূইয়া পরিবহনে’ ওঠেন জাকির হোসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাই আর বইলেন না, শিয়া মসজিদ থেকে শ্যামলী আসতে আধঘণ্টার বেশি লাগাইছে। সারা বাসে দাঁড়ানোর মতো যায়গা নাই, তারপরও ১৫ মিনিটের উপরে শ্যামলীতে থেমে ছিল। কতোক্ষণে উত্তরা যাবে কে জানে?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই গাড়ি যেভাবে একটু পরপর থামাচ্ছে, লোকাল গাড়িও এতো বাস থামায় না। লোকাল গাড়িও যাত্রীভর্তি হয়ে গেলে গাড়ি চলে, আর এই সিটিং বাসগুলো অনর্থক থামিয়েই রাখছে। ’

ভূইয়া পরিবহনের অপৎরতার চিত্র তুলে ধরে জাকির বলেন, ‘যাত্রীভর্তি হওয়ার পরও সময়ক্ষেপণে বাসের ভেতরে যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন, ‘ড্রাইভার যান না কেন?’ তখন ড্রাইভারও পাল্টা হুংকার দেয়, ‘লোকাল লোকালের মতোই যাইবো। ’ সঙ্গে হেল্পার সগিরও গলা মেলায়, ‘সব গাড়ি লোকাল বানাইছে, এখন পাবলিক বুঝুক কত ধানে কত চাল?’

তবে ‘সিটিং’য়ের নামে অন্যায্য ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে নির্দেশনা দেওয়া হলে তেমন কোনো তালিকা বা চার্ট দেখাতে পারেননি সগির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিক জানে, আমরা জানি না। ’

এদিকে, ‘লোকাল’ করার পর পরিবহনগুলোর এমন তৈরি করা ‘ভোগান্তি’ সহ্য করতে হচ্ছে রাজধানীর অন্যান্য রুটের যাত্রীদেরও। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছেন না কর্মম‍ুখী মানুষ। যে দু’একটি পাচ্ছেন, হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠছেন, কিন্তু সে বাস যেন আবার চলতেই চাইছে না।

ফার্মগেট এলাকায় কর্মদিবসে সবসময়ই যানজট লেগে থাকলেও সোমবার দুপুরে এ এলাকা দেখা গেছে অনেকটাই ফাঁকা। যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গন্তব্যের বাস পাচ্ছেন না।

ফার্মগেটে অপেক্ষমান আক্তার হোসেন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বাংলানিউজকে বলেন, ‘একঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি বনানী যাবো বলে। কিন্তু বাস নেই, দু’একটা এলেও উঠতে পারছি না। বাস মালিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। তারা ইচ্ছে করে গাড়ি বন্ধ করে রেখেছে। ’

গণপরিবহনে অন্যায্য ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ঠেকাতে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীতে ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। রোববার (১৬ এপ্রিল) থেকে কার্যকর করা হয় এ সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরই পরিবহন সংকট তৈরি করে নগরজুড়ে নতুন নৈরাজ্য শুরু করেছেন পরিবহন মালিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
পিএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।