ঘটনাটি ঘটেছে ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রত্নেশ্বর ভট্টাচার্জের আদালতে। সেদিন থেকেই কারাভোগ করছেন ওই রিকশাচালক।
মামলার মূল আসামি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার নলছিয়া গ্রামের মৃত মইচ উদ্দিন শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম।
আর কারান্তরীণ ওই রিকশাচালকের নাম মোজাফ্ফর রহমান। তিনি ওই একই গ্রামের মৃত ছিদ্দিক বেপারির ছেলে।
সোমবার দুপুরে মোজাফ্ফরের বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় তার স্ত্রী সেলিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকার মগবাজারে আমার স্বামী রিকশা চালান। ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ১ এপ্রিল বাড়িতে আসেন তিনি। ১০ এপ্রিল মামলার আসামি নজরুলের বড় ভাই মজনু মিয়া এসে আমার স্বামীকে বলেন, তোমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তোমাকে গাইবান্ধা যেতে হবে। এ খবর শুনে আমরা হতবাক হয়ে যাই। পরে মজনু কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার স্বামীকে অটোরিকশায় করে গাইবান্ধায় নিয়ে যান। পরে আমার স্বামীকে বোঝানো হয়, মামলায় তার নাম ভুল করে নজরুল ইসলাম ও বাবার নাম মইচ উদ্দিন লেখা হয়েছে। আদালতে নজরুল নাম ডাকলেই তিনি যেন হাজির হন। এরপর আমার স্বামীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সেলিনা বেগম আরো বলেন, আমার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ডে নাম মোজাফফর রহমান, বাবার নাম মৃত ছিদ্দিক বেপারী ও গ্রাম নলছিয়া লেখা রয়েছে। আমার স্বামী কোনো অপরাধ করেননি। এছাড়া কোথাও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ১০ এপ্রিল মোজাফ্ফর রহমানকে নজরুল ইসলাম সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর ১১ এপ্রিল একই আদালতে জামিন আবেদন করা হলে আদালত সেটিও নামঞ্জুর করেন। এরপর থেকে মোজাফ্ফর কারাগারে রয়েছেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুপুরে আট বছরের একটি মেয়েকে একই গ্রামের ধর্ষণের চেষ্টা করেন নজরুল। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে ৬ জানুয়ারি গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আদালত সাঘাটা থানা পুলিশকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে সাঘাটা থানা পুলিশ ঘটনাটি মিথ্যা বলে ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই বছরের ৩ মার্চ বাদী ওই প্রতিবেদনের ওপর আদালতে নারাজির আবেদন করেন। পরে আদালত ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ২৯ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর আদালত নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থেকে আসামি নজরুল পলাতক।
এদিকে, সোমবার সকালে আসামি নজরুলের বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নজরুলের নামে মামলার পর থেকে তার বাড়ির সবাই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আইনজীবীদের সব আসামি চিনে রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া ১০ এপ্রিলের ওই ঘটনাটি আমাদের নজরে আসেনি। তবে এমনটা হয়ে থাকলে বাদীর মাধ্যমে মূল আসামি চিহ্নিত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এসআই