ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে আয়েশে চালকরা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে আয়েশে চালকরা! রাস্তায় রাস্তায় বাস বন্ধ করে রেখে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চন্দ্রা-চিড়িয়াখানাগামী ইতিহাস পরিবহন। অন্যান্য দিন পরিবহনটির বাসগুলো রাজধানীর রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়ালেও সোমবার (১৭ এপ্রিল) পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

এরই একটি বাসের মধ্যে কয়েকটি সিট ভেঙে বিছানা তৈরি করে ঘুমিয়ে ছিলেন চালক মামুন ও হেলপার মঞ্জুরুল। অন্য বাসগুলোর অনেককেও বাসের মধ্যে আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে-বসে থাকতে দেখা গেছে।


 
বাস বন্ধ রেখে এসব শ্রমিকরা গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। যাত্রীদের জিম্মি করে অনেকে আবার সিটিং সার্ভিস চালু রাখার পক্ষে সাফাই গাইছেন।
 
বন্ধ রাখা বাসের মধ্যে চালক মামুন বলেন, ‘যতোদিন নতুন করে ভাড়ার চার্ট না করবো, ততোদিন বাস বন্ধ রাখবো। লোকালের ভাড়াও দিতে চান না যাত্রীরা। ২০১৫ সালের চার্ট (ভাড়ার তালিকা) মানি না’।

 শুধু ইতিহাস পরিবহনই নয়, চিড়িয়াখানা রুটের বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক বাস বন্ধ রেখে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মিরপুর রুটেরও জাবালে নূর, জাবালে তুর, আকিক, তেঁতুলিয়া, রব রব, অ্যাকটিভ, অছিম, বসুমতি, নূরে মক্কা, প্রজাপতিসহ অধিকাংশ পরিবহনের অসংখ্য বাস বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

এসব বাসের চালক-সহকারীরা আয়েশি সময় কাটাচ্ছেন। ফলে সিটিং সার্ভিস বন্ধের দ্বিতীয় দিনে গণপরিবহনের অভাবে লোকাল সার্ভিসের সুফল পাওয়ার পরিবর্তে নাকাল হচ্ছেন নগরবাসী।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণার জেরে যেন অঘোষিত ধর্মঘটে নেমেছেন মালিক-শ্রমিকরা।   ব্যস্ততম সড়কগুলোতেও গণপরিবহন নেই বললেই চলে। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মব্যস্ত রাজধানীবাসী।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও থেকেও মিলছে না গণপরিবহনের দেখা। যাত্রীদের অভিযোগ, আগের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রীদের জিম্মি করতেই না বলে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় বাস বন্ধ করে রেখে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।  ছবি: বাংলানিউজ
মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আব্দুল্লাহপুর যাবেন কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগি মিনু। প্রায় ৩৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। অনেকক্ষণ পর পর দুই-একটা বাস এলে ওঠা দায়।

মিনু ‍বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিটিং থাকার সময় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে এয়ারপোর্টে যেতেই ২০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন ভাড়া একটু কম লাগে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারছে না বলেই বাস বন্ধ করা হয়েছে। এসব চালককে আইনের আওতায় আনা দরকার’।

এদিকে বাসপ্রতি জমা দেওয়া নিয়ে লিজে দেওয়া বাসের চালক ও মালিকপক্ষের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে বলেও সূত্রগুলো জানায়।

পরিবহন চালকদের দাবি, বাস লোকাল হওয়ায় আয় কমলেও মালিকপক্ষকে আগের হারেই প্রতিদিন টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় বাস বন্ধ করে রেখে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।  ছবি: বাংলানিউজ
 ৩৯/এ নম্বর রুটে চিড়িয়াখানা থেকে বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু কদমতলী প্রান্ত পর্যন্ত চলাচলকারী দিশারি পরিবহনের একটি বাসের চালক কবির বলেন, ‘সিটিং থাকার সময় কোম্পানিকে প্রতিদিন যে টাকা দেওয়া লাগতো, এখনও তাই দিতে হচ্ছে। কোম্পানি টাকা কম নেয় না। অথচ যাত্রীরা যে ভাড়া দিচ্ছেন, তাতে জমার টাকা উঠছে না’।
 
বাস ‍চালকদের এ অভিযোগ নাকচ করছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। দিশারি পরিবহনের পরিচালক আজমুল হুদা মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসব কথা যেসব চালক বলছেন, তারা মিথ্যা কথা বলছেন। বাস লোকাল হওয়ার পর থেকে চালকদের আমরা অনেক ছাড় দিচ্ছি। আগের চেয়ে দৈনিক সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকা করে কম নেওয়া হচ্ছে’।
 
যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ‘জমা বেশি বলে নয়, আমাদেরকে জিম্মি করে সিটিংয়ের ভাড়া ওঠাতে চান তারা। আর মালিকের জমার দায় যাত্রীদের ওপর চাপাতে বা দুর্ভোগে ফেলতে হবে কেন, যেখানে গাদাগাদি করে যাত্রী উঠিয়ে সিটিং সার্ভিসের চেয়েও বেশি আয় করতে পারছেন?’  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।