ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পরিবহন সংকটে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
পরিবহন সংকটে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পরিবহন সংকটে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

রাজধানীর গণপরিবহনে ‘সিটিং’ সার্ভিসের নামে এতোদিন ধরে অন্যায্য ভাড়া আদায়ের যে নৈরাজ্য চলছিল তা রোববার (১৬ এপ্রিল) থেকে বন্ধের নির্দেশ জারি করে সরকার। কিন্তু এই নির্দেশের পর কার্যত পরিবহন ধর্মঘট চলছে ঢাকা নগরজুড়ে। বিভিন্ন টার্মিনালে গাড়িগুলোকে অলস বসিয়ে পরিবহন মালিকরা ‘সিটিং’ বন্ধের প্রতিশোধ নিচ্ছেন এবং ‘সিটিং’য়ের প্রয়োজনীয়তা দেখানোর চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এই চরম দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কৃত্রিম সংকট তৈরিতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। সে ক্ষোভ তারা উগরে দিচ্ছেন বাসের মধ্যে, রাস্তা-ঘাটে, চা দোকানে।

ফেসবুকেও চলছে পরিবহন মালিকদের এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ। বাংলানিউজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বিভিন্ন নিউজের প্রতিবেদনে শত শত কমেন্ট করে পাঠকরা বাস সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

তারা বলছেন, ‘সংকট’ তৈরি করলেও সরকারকে ‘শৃঙ্খলা’ ফেরানোর এ সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে হবে। যে পরিবহন মালিকরা বাস বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনভোগান্তির সৃষ্টি করছেন তাদের আইনের আওতায়ও আনার পরামর্শ দিচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। পরিবহন সংকটে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াবাস বসিয়ে রাখার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে খন্দকার হাসানুল হক পলাশ নামে এক পাঠক মন্তব্য করেন, “এইসব পরিবহন মালিকদের...মাইরা ওদের লাইসেন্স বাতিল করে সরকারি বাস নামিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাতে তাদেরও উচিৎ শিক্ষা হবে, ঢাকার পরিবেশ ও রক্ষা হবে। ”

বাস বন্ধ করে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় হোতাদের খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেক পাঠক। যেমন কবির হোসেন ও মামুনুর রশিদ তপু চৌধুরী বলেন, “তা হলে এরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। ”; হোসাইন মোহাম্মদ তায়েব বলেন, “রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণ থেকেও কি শক্তিশালী এই বাস কোম্পানিরা?”; কাজী মোজাম্মেল বলেন, “রাইদা পরিবহনের মালিক কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?”; মাহফুজুল হক বলেন, “এই বাসের রুট পারমিট বাতিল করে দিন। ”; মেহেদী এইচ বাপ্পি বলেন, “সবাই বাই-সাইকেল কিনুন সময় টাকা উভয়ই বাঁচবে। ”

এহসান খান, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও মাসুদ হাফিজ নামে তিন জন পাঠক বরং সরকারকে দিয়েছেন পরামর্শ। তারা বলেন, “এখনি সুযোগ বেসরকারি বাস বন্ধ করে দেওয়ার, সরকারি পরিবহন সর্বস্তরে চালু করার। যাতায়াত জনগণের অন্যতম অধিকার। ”

বাস কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় চলাচল করা গাড়িগুলোর সময়ক্ষেপণ করে জনভোগান্তি সৃষ্টির চিত্র তুলে ধরে মাহমুদুল হাসান নামে আরেক পাঠক বলেন, “বাস্তবতা হলো, এখন আর দরজা বন্ধ করা ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে কিছু নেই সত্য। কিন্তু গাড়িগুলো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে, দরজা পর্যন্ত ঝুলিয়ে যাত্রী বহন করছে এবং ভাড়া রাখছে সেই আগের দরেই। বিপাকে পড়েছেন কর্মমুখী নারী, বৃদ্ধ ও স্কুলগামী শিশুরা। এখন সবাই বলছেন, তাহলে তো অবৈধ হলেও আগের সিটিং সার্ভিসই ভালো ছিল। কারণ এখন সিটিং সার্ভিসের ভাড়া গুনে তাদের দিব্যি লোকাল বাসে চড়ে গাদাগাদি করে চ্যাংদোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। ”

পরিবহন সংকটে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ামানুষের ভোগান্তি বাড়ানোর এ পদক্ষেপকে ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো বলে’ কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন মাহমুদুল।

তবে ‘লোকাল’র বিষয়টি স্পষ্ট এবং ভাড়ার তালিকা সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দিয়ে আরিফুল ইসলাম নামে আরেক পাঠক বলেন, “লোকাল মানে এই না যে ৩৭ সিটের আসনে ৬০ জন ওঠাবে। বিআরটিএ পরিবহনওয়ালাদের ৩৭ জন নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে...বিআরটিএ বলেনি যে লোকাল মানে যাত্রী বেশি নিতে হবে...আর এখন যে তালিকা দেখিয়ে বাসওয়ালার ভাড়া নিচ্ছে সেটা ‘সিটিং’ সার্ভিসের জন্য তাদের নিজেদেরই নির্ধারিত ছিল, লোকাল সার্ভিসের জন্য নয়। ”

ইমরান হোসেন নামে এক পাঠক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ অবস্থা পুরোপুরি অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পনার কারণে  তৈরি হয়েছে। আমি বলতে চাই না যে এটা নীতি-নির্ধারকদের জ্ঞানের অপ্রতুলতায় তৈরি হয়েছে...আসলে তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ”

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়ে সুব্রত হাওলাদার ও লিমন মাহমুদের মতো কয়েকজন পাঠক বলেন, “সরকার লাভ-লোকসান হিসাব করে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও মুনাফালোভী পরিবহন মালিকরা মুনাফা কম হয়ে যাচ্ছে দেখে সিটিং ছাড়তে চাইছে না। তারা অতি মুনাফার ফাঁদ ‘সিটিং’র প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বাস চালকদের বসিয়ে রেখে এই সংকট তৈরি করেছে। সরকার শক্ত হাতে হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আর ঘরে চাল-ডালের অভাব পড়লে বাসের চালক-হেলপাররাই গাড়ি নিয়ে নামতে বাধ্য হবে। জনগণের দরকার কেবল কিছুদিন ধৈর্য্য ধরার...। ”

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।