ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কি চমৎকার দেখা গেল...

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
কি চমৎকার দেখা গেল... কি চমৎকার দেখা গেল...

বগুড়া: ‘কি চমৎকার দেখা গেল এইবারেতে আইসা গেল ঢাকা শহর দেখেন ভালো। কি চমৎকার দেখা গেল কুতুব মিনার হেলে গেল। কি চমৎকার দেখা গেল যমুনায় পানি এলো সরকার বাড়ি ভাইসা গেল’।

একহাতে খঞ্জনি আরেক হাতে লাল কাপড় নিয়ে ছন্দভরা বাক্যে অবিরাম এসব বলে চলছিলেন নিফাজ আলী (৬০)। বায়োস্কোপ দেখানোর কারিগর তিনি।

খঞ্জনি আর গানের তালে পাল্টে যাচ্ছিল বাক্সের ভেতরের ছবিগুলো। সেই কাঠের বাক্সের সামনে লাগানো আয়নায় চোখ লাগিয়ে বসেছিল ছয় শিশু।

বাক্সের ওপরে রয়েছে আরেকটি আয়না। সেই আয়নায় নিজেই মাঝে মধ্যে চোখ বুলাচ্ছিলেন। যেন ভুল না হয় সেজন্য নিজেই ছবিগুলো দেখে নিচ্ছিলেন। ছবির সঙ্গে মিল রেখে ছন্দের যাদুকর নিফাজ আলী ‘কি চমৎকার দেখা গেল..’ শেষ করেই পরের বাক্যগুলো বলে যাচ্ছিলেন।
 
ছবি আর নিফাজ আলীর ছন্দভরা বাক্যে ছবির বর্ণনায় বায়োস্কোপের কাঁচের জানালায় চোখ লাগিয়ে রাখা শিশুদের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠে এক অজানা পৃথিবী। দেশের চিরচেনা একটি লোকজ ঐতিহ্যের নাম বায়োস্কোপ। এক সময় এটি গ্রাম বাংলার শিশুদের চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এই বায়োস্কোপ।
 
বগুড়ায় শহীদ টিটু মিলনায়তন প্রাঙ্গনে বগুড়া থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় এই বায়োস্কোপের দেখা মেলে। কাঠ ও টিনের সমন্বয়ে তৈরী বাক্স বায়োস্কোপ। এতে চোখ লাগানোর জন্য যুক্ত থাকে ছয়টি আয়না। এসব আয়নায় চোখ লাগিয়ে শিশু-বুড়ো সব বয়সী মানুষ ছবি দেখার দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। একসঙ্গে ছয় জন উপভোগ করতে পারেন একটি প্রদর্শনী।   বায়োস্কোপে একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে নানা ঢংয়ের মাধ্যমে বর্ণনা করতে হয়। যা অত্যন্ত কষ্টকর কাজ বটে। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে বায়োস্কোপ দেখানোর উদ্যোগ নেয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
কি চমৎকার দেখা গেল...
বায়োস্কোপ দেখাতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার পান্দাল গ্রাম থেকে বগুড়ায় আসেন নিফাজ আলী। প্রায় ৩৫ বছর আগে শখের বসে নিজেকে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি করেন কৃষি কাজ। ডাক পেলে যেকোনো শহর-গ্রামে বায়োস্কোপ দেখাতে ছুটে যান তিনি। বিনিময়ে প্রত্যেক চোখের বিপরীতে ১০ টাকা করে নেন। বায়োস্কোপ দেখিয়ে দিনে গড়ে প্রায় ৪০০ টাকা আয় হয়। এই আয়েই চলে নিফাজ আলীর সংসার।

নিফাজ আলী বাংলানিউজকে জানান, এক সময় গ্রাম বাংলার সিনেমা হল ছিল বায়োস্কোপ। নানা রংয়ের ঢংয়ের পোষাক পরে শহর-গ্রামে ছুটে বেড়াতেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা বায়োস্কোপ দেখতে ছুটে আসত। কিন্তু বায়োস্কোপের সেই সোনালী দিন আর নেই।
 
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমি আকতারের সঙ্গে মেলায় এসেছিল তার ছোট ভাই সাগর ও খালাতো বোন হ্যাপি। তারা বাংলানিউজকে জানায়, বায়োস্কোপের গল্প এতোদিন শুধু বড়দের ‍মুখে শুনেছি। কিন্তু নিজ চোখে দেখা হয়নি। মেলায় এসে সেটা দেখা হলো। পাশাপাশি ভীষণ মজাও উপভোগ করা হলো।

একই কথা জানা গেল এ প্রজন্মের সুমি আকতার, মনি, শুভ, তানভীরের মুখে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এমবিএইচ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।