ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

নেত্রকোনা: খরগোশ পালন করে জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের কালাপানি গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের মানুষগুলো নিজেদের অভাব দূর করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

স্বল্প সময় ও খরচে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় তারা খরগোশ পালন করছেন। গ্রামের পঁয়তাল্লিশটি পরিবার শুধু খরগোশ পালন করেই ফিরিয়ে এনেছেন নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওইসব লোকজন প্রথমে খরগোশ পালনকে শখ হিসেবে নিলেও আর্থিক লাভ হওয়ায় তারা এখন বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন শুরু করছেন।

খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

শান্ত স্বভাবের এই প্রাণীটির সুস্বাদু মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম আর প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় মানুষের মধ্যে এর মাংসের চাহিদাও দিনদিন বেড়ে চলেছে।

খরগোশ পালনকারী ওই গ্রামের বাসিন্দা ফিদিল রিসিল (৬০)। তিনি পালন করছেন পঁচিশটি খরগোশ। দ্রুত বর্ধনশীল খরগোশ পালনের জন্য তেমন বাড়তি ঝামেলা নেই। ফিদিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘খরগোশ পালনের আগে অর্থাভাবে সংসারের খরচ চালাতে পারতাম না। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন যাপন করেছি। ’

খরগোশ পালনের পরিকল্পনা কোথা থেকে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফিদিল জানান, বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন খরগোশ পালনের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পরে ওই এনজিও তাদের  গ্রামের প্রতিটি পরিবারে তিনটি করে খরগোশ দেয়। এর মধ্যে একটি পুরুষ ও দুইটি নারী খরগোশ। এর পর থেকেই শুরু হয় তাদের খরগোশ পালন।

খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র শুভয় মান্দা। তিনি বাংলানিউজকে জানান, খরগোশ পালন করে অল্প সময়েই প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় খাঁচা তৈরি করে খরগোশ পালন করা হয়। এদের পালনের জন্য খাবার খরচ নেই বললেই চলে। কারণ খরগোশ কচি ঘাস, লতা-পাতা, শস্য দানা, গাজর, মূলা, শশা, মিষ্টি আলু, খড়কুটো, তরকারির ফেলনা অংশ, গম, কুড়া, ভুসি, খৈল, সয়াবিন, দুধ, পাউরুটি, ছোলা ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে খাবার অবশ্যই পরিষ্কার অবস্থায় দিতে হবে।

খরগোশ বছরে আট থেকে ১০ বার বাচ্চা দিতে সক্ষম। এক একটি নারী খরগোশ প্রতিবার দুই থেকে আটটি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। প্রাপ্ত বয়সী একজোড়া খরগোশ প্রকারভেদে সাড়ে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলেও জান‍ান শুভয়। খরগোশের দু’তিন দিন বয়সী বাচ্চা প্রতিটি আশি থেকে একশ’ টাকায় বিক্রি করা হয়।

খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী

গৃহিণী নিশী নকরেক বাংলানিউজকে জানান, অতি সুস্বাদু হওয়ায় মাংসের চাহিদাও পূরণ করছে খরগোশ। অন্যান্য কাজের ফাঁকে খরগোশ পালন করেন তিনি। খরগোশের চামড়া, পশম, মাংস বিক্রি করেও প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা ওয়ার্ল্ড ভিশনের নাজিরপুর (এডিপি) অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার নিঝুম সাংমা। বাংলানিউজকে বলেন, কালাপানি এলাকায় জরীপ করে দেখা গেছে, এই এলাকা খরগোশ পালনের জন্য খুবই উপযোগী। তাই এই এলাকার পঁয়তাল্লিশটি পরিবারের সদস্যদের খরগোশ পালনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের তিনটি করে খরগোশ দেওয়া হয়। এখন ওই পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সাফল্য দেখে অন্যান্যরা খরগোশ পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।