হৃদয়বিদারক করুণ এ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছেলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শেষে বাবার মরদেহ হস্তান্তরে আইনি প্রক্রিয়া চলছিল।
বেনাপোল সীমান্তে স্বজনদের করুণ আহাজারিতে বেদনার্ত হয়েছেন উৎসুক মানুষেরাও।
হতভাগ্য বাবা রফিক ছিলেন গাজীপুর মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দবাড়ির বাসিন্দা। ছেলে আসাদ (১৪) ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
বেনাপোল চেকপোস্টের নো-ম্যান্সল্যান্ডে বাবা-ছেলের মরদেহ নিতে আসা মৃত রফিকের চাচা খন্দকার আলী জানান কষ্টের এ গল্প।
তিনি জানান, একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে দেশেই আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন বাবা রফিক। সব জমি-জমা বিক্রি করে ডাক্তারের পরামর্শমতো ৪ মাস ধরে ছেলের চিকিৎসার পেছনে অর্থ খরচ করেছেন।
ডাক্তারও আশ্বস্ত করে আসছিলেন, ছেলে আসাদ সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু দিন দিন ছেলের শারিরীক অবস্থা উন্নতির বিদলে খারাপের দিকে যাওয়ায় বাবার মন ভালো বলছিলো না। তাই তিনি আত্মীয়ের পরামর্শে ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে গত ১৪ এপ্রিল ছোটেন ভারতে।
কিন্তু সেখানেও কোনো কাজ হয়নি। ভারতের ডাক্তার বলে দেন, ‘ছেলের যে হাল করে এনেছেন, তাতে বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই। অযথা টাকা খরচ না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যান’।
ছেলের নিশ্চিত মৃত্যু জেনে ১৭ এপ্রিল তাকে নিয়ে সোমবার বাড়িতে ফিরছিলেন বাবা রফিক। এরই মধ্যে হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পথিমধ্যে মারা যায় ছেলে আসাদ।
আবার কলকাতা ফিরে গিয়ে সরকারি নিয়ম অনুসারে পাসপোর্টের কাজ শেষ করে ছেলের মরদেহ নিয়ে ফিরছিলেন। সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ঢোকার আগ মুহূর্তে ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ছেলের কফিনের পাশেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রফিক।
পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভারতের পেট্রাপোল থানার পুলিশ বাবার মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য পাঠিয়েছে। আর ছেলের মরদেহ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশে তার স্বজনদের কাছে ফেরত দেন।
বাবা-ছেলের এমন মৃত্যুর খবর শুনে এক নজর দেখতে চেকপোস্টে উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছে। তাদের সবার চোখেও বেদনার ছাপ।
সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ‘এমন খবর এর আগে কখনো শুনিনি। তাই দেখতে এসেছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এএসআর