শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে সুপারশপ আগোরায় মাছ কিনতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সময়, খরচ ও গরম থেকে বাঁচতে আগোরায় আসা।
তিনি বলেন, তেলাপিয়া মাছ সাধারণ বাজারে প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও আগোরা নিচ্ছে ১৭০ টাকা। রুই মাছ ২৪০-৩০০ টাকার স্থলে ৩৮০-৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস ৮০ টাকার স্থলে ১৪০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৮০ টাকার স্থলে ২৩০ টাকা করে নিচ্ছে আগোরা। এভাবে প্রতিটি পণ্যেরই বেশি দাম রাখা হচ্ছে’।
![পচা মাছ বরফ দিয়ে বিক্রি আগোরায়। ছবি: বাংলানিউজ](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/agora120170418123417.jpg)
সরেজমিনে আগোরায় গিয়ে দেখা গেছে, রুই, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন জাতের মাছ বরফের স্তুপে ডুবে আছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, একটু ভালো করে খেয়াল করেলেই বোঝা যায়, ফ্রিজ থেকে বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। পচা মাছ থেকে বের হচ্ছে উৎকট গন্ধ।
ক্রেতাদের অভিযোগের পর রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গেলে মাছ ব্যবসায়ী করিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগোরা তো আমগো কাছ থেইকা মাল লয়। শুধু মাছ নয়, সবজিও লয়। মাছ বিক্রিতে দামেও প্রায় ১০০ টাকা তফাৎ আছে’।
কারওয়ানবাজারে বাজার করতে আসা শান্তিনগরের নীলা বলেন, ‘আমি আগে আগোরা থেকে বাজার করতাম। কিন্তু সেখানকার মাছ ও সবজির দাম বেশি। নরম মাছ বরফ দিয়ে রেখে দুই-তিনদিন পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। গত মাসে আগোরা থেকে মাছ কেনা হয়েছিল। ওই মাছ খেয়ে পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে যান। এখন আর আগোরায় যাই না’।
আগোরায় বাজার করা অনেক ক্রেতার অভিযোগ, মাছ ছাড়াও দুই-তিনদিন আগের গরু, খাসি ও মুরগির মাংস এবং কারওয়ানবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রি করা হয়।
নীলা জানান, কারওয়ানবাজারে পণ্য কেনার সময় মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন তিনি। আরও অনেকেই জানেন। এ কারণে এখন তিনি সরাসরি কারওয়ানবাজার থেকেই বাজার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ বাজারে ব্রয়লারের মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, আগোরায় ২৪৮ থেকে ২৭৫ টাকা। যেখানে বাইরে খাসি জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, সেখানে আগোরায় প্যাকেট করা খাসির মাংসের দাম ৮৩০ টাকা কেজি। এছাড়া সাধারণ বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮০ টাকায়, আগোরায় যার মূল্য ৪৯৫ টাকা।
শাক-সবজি, ডাল-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামও আগোরায় বেশি। বেগুন সাধারণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, আগোরায় ৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা, বরবটি ৪৫ টাকার স্থলে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা, লাউ ৩৫-৪০ টাকার স্থলে ৬০ টাকা এবং কচুর লতি ৩৫-৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে আগোরা।
ফলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এক কেজি মাল্টার দাম আগোরায় ১১০ টাকা, যা বাজারে বা ফলের দোকানে বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকায়। একইভাবে আপেল ১৭০-১৮০ টাকার স্থলে ১৪০-১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আগোরা’র একজন কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দুই-তিনদিন আগের বলতে মাছ-মাংসগুলো বরফ দিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি তো আমাদের ব্যবসা, ভালো-মন্দ আমরা কম বুঝি না’।
ক্রেতাদের অভিযোগ বলতেই রেগে যান তিনি। বলেন, ‘আমাদের নামে কোনো অভিযোগ নেই। আমরা ব্যবসা করি। ভালো লাগলে কিনবে, না হলে কিনবে না। আমরা তো জোর করে কাউকে চাপিয়ে দিচ্ছি না। আর আপনারা তো সব সময় উল্টো-পাল্টা লেখেন’।
কিন্তু পণ্যের মান তো সঠিক থাকতে হবে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পণ্যের মান ঠিকই আছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
আরএটি/এএসআর/জেএম