ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

লোকাল বাসে সিটিং ভাড়া!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
লোকাল বাসে সিটিং ভাড়া! ভিআইপি ২৭ নং বাসে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া; ছবি- হারুন

ঢাকা: আজিমপুরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। সাধারণত সকাল সাড়ে আটটায় নাগাদ নিউমার্কেটের সামনে থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বিপরীত পাশের সড়কে দীর্ঘ বাসের সারি থাকলেও সিটিং বাস সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর থেকে চিত্র ভিন্ন। 

মালিকরা বাস কম নামাচ্ছেন রাস্তায়।  ভিআইপি বাসের কাউন্টারের সামনে টিকেট কেটে অপেক্ষা করছেন লঙ্কা বাংলা ফাইনান্স এর কর্মকর্তা রেজাউল করীম।

 আজিমপুর থেকে বনানীর ভাড়া ১৫ টাকার জায়গায় নিয়েছে ৩০ টাকা।

অন্যদিকে ন্যূনতম ৭ টাকা ভাড়ার কোনো টিকেট মিলছে না কাউন্টারগুলোতে।  সেই টিকেট রয়েছে কেবল কাউন্টারের টেবিলের ড্রয়ারে।

বাসের ভেতরে তিল ধারণের জায়গা নেই।  একজনের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন অন্য যাত্রী।  তারপর জায়গায় জায়গায় বাস থামছে ইচ্ছেমতো। হেলপারদের এক কথা, ‘লোকাল বাস, থাইমা থাইমাই যাইব। ’ ভোগান্তির যেন শেষ নেই সাধারণ যাত্রীদের।

বাসটি নিউমার্কেট ছেড়ে কলাবাগানের পথে রওনা দিয়েছে।  তখন সকাল প্রায় পৌনে নয়টা।  ল্যাব এইড হাসপাতালের বিপরীত সড়কে রয়েছে ভিআইপি বাসের কাউন্টার।  সেখানে গিয়ে দেখা মেলে ভিআইপি বাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাজ্জাকের।  রাজ্জাকের সামনেই যেন ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রী রেজাউল করীম।  টিকেট দেখিয়ে অভিযোগ করেন বাড়তি ভাড়ার ।

মোহাম্মদ রাজ্জাক রেজাউল করীমের অভিযোগ শুনে বলেন, হয়তো ভুল করে বাড়তি ভাড়া নিয়েছে।  এটা কোনো বিষয় না। অন্যদিকে একই কাউন্টারে মোহাম্মদ রাজ্জাকের সামনে কলাবাগান থেকে শ্যাওড়া যেতে লোকাল ভাড়া যেখানে ২০ টাকা সেখানে টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, দুই দিন হলো সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়েছে।  আমাদের কাছে নতুন টিকেট ছিলো না। গতকাল মুখে মুখে ভাড়া কেটেছে হেলপাররা।  আজই লোকাল টিকিট এসেছে।  তাই হয়তো কিছু ভুল হয়েছে।  আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তবে বাস মালিকদের হয়রানির মূল শিকারই যেন হচ্ছেন নারী যাত্রীরা।  আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে ফাল্গুন বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কমার্স ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের।  বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়ে সাদিয়া বসে আছেন ফাল্গুন বাসে।  গন্তব্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।  প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাস ছাড়ছে না।  আছে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস।  চিন্তিত এই বাবা বারবার মুছছেন কপালের ঘাম।

বাংলানিউজকে বললেন, আমি থাকি কলাবাগানে।  সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ায় মাঝ পথে মেয়ে বাসে উঠতে পারে না। সকালে আজিমপুর থেকে যেহেতু বাস সার্ভিস শুরু হয় তাই এখানে এসেছি।  সকাল নয়টায় তার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস।  কিভাবে পৌঁছাবে তা তো বুঝতে পারছি না।  কিছু বললে হেলপাররা খেকিয়ে উঠে, ‘লোকাল বাস যখন ইচ্ছা ছাড়বো। ’ পরিবহন মালিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গিয়েছি।  কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে সেই আগের মতোই।

অন্যদিকে এসব কাউন্টার থাকা বাস কর্তৃপক্ষ নিজের ইচ্ছামতো একটি ভাড়ার তালিকা রেখেছে।  কিন্তু তাও মানছেন না নিজেরাই।

সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না করা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান সম্ভাব না বলে মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা। সাধারণ যাত্রীদের মতে, সরকারি পরিবহন সেবা পর্যাপ্ত করা হলেই এসব অসাধু বাস মালিকদের দৌরাত্ম্য কমবে।

প্রসঙ্গত, পরিবহন মালিকপক্ষ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মধ্যকার বৈঠকে  অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে রাজধানীতে গণপরিবহনের ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।  রোববার (১৬ এপ্রিল) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
ইউএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।