ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘সিটিং’র ‘চিটিং’ ফেরাতেই ‘কৃত্রিম পরিবহন সংকট’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
‘সিটিং’র ‘চিটিং’ ফেরাতেই ‘কৃত্রিম পরিবহন সংকট’ সংকটে একটি বাস পেয়ে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মিরপুর ১০ নম্বর। কাঠফাটা রোদের বেলা; সঙ্গে তীব্র তাপদাহ। উদ্‌ভ্রান্তের মত বাসের জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেসরকারি সংস্থার অর্থউপদেষ্টা ডেভিড হাজরা।গন্তব্য মতিঝিল। একবার হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন। আরেকবার হাত কপালের উপর ঠেকিয়ে রোদ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন।

কাছে যেতেই ঝাড়লেন এক গাদা অভিযোগ, কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে। ওঠার মতো বাস নেই।

বাসভর্তি লোক। ওঠা যাচ্ছে না। সব পরিবহন যদি রাস্তায় থাকতো তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। সব সময় পরিবহন সেক্টর আমাদের জিম্মি করে। শেষ পযর্ন্ত ওদের দাবিই মেনে নিতে হয়। এবারও ইচ্ছা করে গাড়ি বন্ধ রেখেছে। যাতে তাদের সিটিং সার্ভিসের মতো চিটিংবাজি আবার চালু হয়!

যাত্রীসেবার মান বাড়ানো ও ভাড়া নিয়ে অনিয়ম দূর করতে রোববার (১৬ এপ্রিল) থেকে বন্ধ  গণপরিবহনে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস। তবে এ সিদ্ধান্তে যাত্রীসেবা বাড়া তো দূরের কথা, উল্টো সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে বহুগুণে। বিশেষ সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার পর থেকেই রাজধানীজুড়ে চলছে তীব্র পরিবহন সংকট।
  
যাত্রীদের দাবি, প্রতারণার সিটিং সার্ভিস চালু কর‍ার জন্যই ইচ্ছা করে মালিকরা কৃত্রিম পরিবহন-সংকট সৃষ্টি করেছেন। পরিবহন-সংকট তৈরি করে রাস্তায় তারা কম গাড়ি নামিয়েছেন। অল্প সংখ্যক গাড়ির কারণে গাড়ির ভেতরে আসন-সংকট  ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ভোগান্তি বেড়েছে।  

সকাল থেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কর্মব্যস্ত মানুষ গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কাঙ্ক্ষিত বাসে উঠতে করছে দৌড়-ঝাঁপ। গাদাগাদির মধ্যে বাসে উঠেও আরেক হ্যাপা। ভাড়া নিয়ে তর্ক-বাদানুবাদ। হেলপারের খারাপ ব্যবহার, কটূক্তি। সেই সঙ্গে অসহনীয় গরম। সব মিলে বিপর্যস্ত জীবন।

সরেজমিনে দেখা যায়, এতদিন ধরে তথাকথিত সিটিং সার্ভিস নামে চলাচলকারী পরিবহনের চালক-হেলপাররা বাসের ভিতরে খারাপ ব্যহারের মধ্য দিয়ে সব রাগ ঝাড়ছেন যাত্রীদের ওপর। যাত্রীঠাসা না-হওয়া পর্যন্ত  তারা দীর্ঘ সময় বাস ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখছেঅ অথচ এসব দেখার তেউ নেই।

মিরপুর টু বসুন্ধরা আবাসিকগামী আকিক পরিবহনের হেলপার বলেন, এই রুটে খুব বেশি যাত্রী নাই। এ কারণে ট্রিপ দিয়ে আগের মতো আর ইনকাম হচ্ছে না।  ভাড়া কমেছে। যাত্রীরা খুশি। আমরা তো আর খুশি না।

এই রুটের যাত্রী আক্কাস আলী বলেন,  ‘সিটিং স‍ার্ভিস থাকাকালীন মিরপর ১০ নম্বর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগত ২৫ টাকা। এখন লোকাল হওয়ায় ভাড়া নেমে গেছে ১৫ টাকায়। ১০ টাকা বেঁচেছে। সিটি সার্ভিসে প্রচুর অনিয়ম ছিলো। ভাড়া বেশি নিত, লোকালের মত যেখানে-সেখানে লোক ওঠাত । এক সিট কয়েকবার বিক্রি হত। এখন ভাড়া অনেক কমেছে। আরেকটু সুশৃঙ্খল হলে লোকালেই ভালো।

‘তবে সিটিং সার্ভিসগুলো লোকাল হওয়ার পর তাদের কর্মচারিদের ব্যবহার অনেক খারাপ হয়েছে। যখন-তখন যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে ওরা। ’-- জানান তিনি।

‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের পর দুই দিন মালিকরা গাড়ি কম বের করেছেন। এর জন্য জনদুর্ভোগের কারণে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিটিং সার্ভিস বন্ধের বিষয়টি আবারও বিবেচনায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন।  

তিনি বলেন,মালিক সমিতির দুই-তিন জনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি তাদেরকে বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছেন বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি। সবাইকে নিয়ে বসে জনস্বার্থে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি।

তবে মন্ত্রীর এই বক্তব্য পরিবহন মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্যই—এমনটাই দাবি করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। মসিউর রহমান নামে এক স্কুলশিক্ষিক বাংলানিউজকে বলেন, আমার মনে হয়, সরকারের এ ডিসিশন থেকে সরে আসা উচিত হবে না। আবারও সিটিং সার্ভিস চালু হলে পরিবহন মালিকদের স্বার্থরক্ষা হবে। আগের মতোই জনগণের ভোগান্তি হবে। পরিবহন সেক্টর যখন-তখন সাধারণ জনগণকে জিম্মি করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।