সংসারের অভাব দূর করা আর দু’বেলা পেট পুড়ে খাবারের সন্ধানে বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর হাত ধরে কাজের সন্ধানে সোনিয়া পাড়ি জমান ঢাকার সাভারে। সেখানে রানা প্লাজার ইউএন স্টাইল নামে একটি গার্মেন্টে ২০১৩ সালের ০২ এপ্রিল এ দম্পতি সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে ফিনিশিংয়ের কাজ পান।
সেইদিন সোনিয়া সপ্তম তলায় কর্মরত ছিলেন। তবে তার স্বামী মিজানুর রহমান তিনদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে থাকায় সেদিন তিনি বেঁচে যান। কিন্তু সোনিয়াকে এক ভয়ানক দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো সেদিন। শুধু সোনিয়াই নন, তার মতো আরো অনেক হতভাগা নারী পুরুষকে দিতে হয়েছে শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গ। এছাড়া ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। তাদেরই একজন হলেন জন্মযোদ্ধা নারী সোনিয়া।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সোনিয়ার ডান পা আটকা পড়ে ধ্বংসস্তুপের নিচে। অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করার তিনদিন পর ২৬ এপ্রিল উদ্ধার কর্মীরা সোনিয়াকে সেখান থেকে বের করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সে যাত্রায় সোনিয়া প্রাণে বাঁচলেও তাকে হারাতে হয় একটি পা। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে ডান পায়ের কোমড়ের নিচ থেকে কেটে ফেলে। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর ফিরে আসে স্বামীর বাড়ি।
পঙ্গুত্ব বরণ করলেও জীবনযুদ্ধে হারতে রাজি নয় সোনিয়া। আর তাই অভাবকে জয় করতে শুরু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। স্বামীর ছোট্ট টিনের ঘরের পাশে একটি ছাপরা ঘর তুলে সরকারি অনুদানের ১০ হাজার টাকা দিয়ে গালামালের দোকান দেন তিনি। তখন থেকেই বেঁচে থাকার তাগিদে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন জন্মযোদ্ধা নারী সোনিয়া।
সোনিয়া বলেন, বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছি। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসেও একই অবস্থা। ভেবেছিলাম দু’জনেই গার্মেন্টে চাকরি করে অভাব দূর করবো। স্বামীকে নিয়ে সুখে ঘর বাঁধবো। কিন্তু সে ইচ্ছা তো আমার পূরণ হলোই না মাছখান থেকে অকালে হারাতে হয়েছে একটি পা।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর সরকারি অনুদান হিসেবে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সে টাকা দিয়ে ঘরের কোণে একটি গালামালের দোকান দিয়েছি। দোকানটি আমি পরিচালনা করি আর আমার স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করে। তবে এর কিছুদিন পর সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকা ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা-এনজিও থেকে আরো বেশ কিছু অনুদান পেয়েছি।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘তার স্ত্রী পা হারিয়ে এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটাচলা করে। তবে ভারি কোন কাজ এখন সে আর করতে পারে না। তাই সামান্য ওই দোকানের আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। সোনিয়া একা চলতে না পারায় তিনিও নিজ জেলা ছেড়ে অন্যত্র কাজে যেতে পারেন না।
২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির চার বছর পূর্ণ হলেও কান্না থামেনি স্বজন হারাদের। অনেকেই এখানো খুঁজে ফেরেন হারানো স্বজনদের।
গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ভবন ধ্বসের ঘটনায় নারী শ্রমিকসহ ৪৯ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। তবে এখনও ১১ জন শ্রমিককে খুঁজে পাননি তাদের পরিবার। শতাধিক আহতদের মধ্যে সোনিয়া একজন।
সোনিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
আরএ