একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন নাকি উপমন্ত্রী- এই নিয়ে চলছে বির্তক। মর্যাদাক্রম ঠিক না হওয়ায় তারা জেলা পরিষদে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের দাবি মর্যাদা ঠিক না হওয়ায় জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) অন্যান্যরা আমাদের কাজ দিচ্ছে না। এমনকি আমাদের কথাও শুনছেন না। নির্বাচন হয়েছে ৪ মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না চেয়ারম্যানরা।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সংবিধানের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের জন্য পদমর্যাদা ঠিক করা জরুরি। আমাদের যেহেতু প্রদেশ নেই, তাই জেলা পরিষদকে প্রদেশ হিসেবেই গণ্য করতে হবে। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘সচিবালয় কোনো কাজে যাওয়ার জন্য একটি পাস দিয়েছে, কিন্তু গাড়িতে কোনো প্রতীক বা মনোগ্রাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত এখনও দেয়নি। যে কারণে আমাদের অনেক সময় ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। ’
রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, ‘যখন জেলা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়, তখন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ছিলো। তখন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিল সেই অনুপাতে কাজ চলছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যেহেতু আর নির্বাচন হয়নি, তাই বিষয়টি আর এগোয়নি। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, যেহেতু সারা জেলার দায়িত্ব আমাদের। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সেহেতু আমাদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া দরকার। সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে উন্নয়ন করতে পারি, উন্নয়ন করতে হলে ক্ষমতা দরকার। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা পরিষদের ঐতিহ্য ফেরত আনতে চাই। এমপিরা আইন প্রণয়নকারী, তারা কেন আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করবেন। গ্রামের ছোট ছোট উন্নয়ন তো আমরা করবো। ভৌত উন্নয়ন তো আমরা করবো। তাই আমাদের একটা পদমর্যাদা থাকা দরকার।
মেম্বারদের পদমর্যাদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উপরে মর্যাদা দাবি করছেন। ‘
শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান (খোকা শিকদার) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু জনপ্রতিদিধের ভোটে নির্বাচিত তাই আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা থাকা উচিত। পদমর্যাদা না হলে কাজ করবো কী করে?’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের এক ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক জানান, ‘আমরা জেলা পরিষদ আইনের ১০টি বিধিমালা প্রণয়ন শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ৬টি বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে চূড়ান্ত করার জন্য। এসব বিধিমালা চূড়ান্ত হলেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সকল সমস্যার সুরাহা হবে বলে আশাকরি। ’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত তথ্যমতে নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিচে হবে না।
জেলা পরিষদের ইতিহাস:
১৭৭২ সালে জেলা প্রশাসন সৃষ্টির ১১০ বছর পর ১৮৮২ সালে লর্ড রিপনের ঐতিহাসিক রেজল্যুশনের মাধ্যমে তিন স্তরের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনে স্থানীয় ‘জেলা বোর্ড’ শক্তিশালী প্রশাসনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়, যা পাকিস্তানের প্রথম দশক পর্যন্ত বজায় ছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা পরিষদের অবকাঠামো, জনবল, সম্পদ ও জাতীয় বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি আড়ালে পড়ে।
১৯৭৫ সালে জেলায় ‘গভর্নর’ নিয়োগ করে জেলা প্রশাসকসহ জেলার সামগ্রিক প্রশাসনকে তার অধীন করে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হয়। পরে বিএনপির শাসনামলে ‘জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ক’ নামে একটি পদ সৃষ্টি করে প্রতিটি জেলায় রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিয়োগ দেওয়া হয়; যা ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে বিএনপি সরকার ডিসিদের এই দায়িত্বে রাখে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরপর তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে চেয়ারম্যানরা পদমর্যাদা ঠিক না হওয়ায় এখনও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসএম/এমজেএফ