প্রকৃতির এই বেখেয়ালিপনা নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। এর ওপর মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক কাজ রাজধানীর যে এলাকায় চলছে, তাদের কাছে এ দুর্যোগ সাক্ষাৎ নরক যন্ত্রণা।
রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকেল থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি। কুয়াশার মতো ভারী জলীয় বাষ্পসমেত হালকা মেঘ যখন সমতলে নেমে আসে, তখন আতঙ্ক দেখা দেয় অনেকের মধ্যে। তবে রাতে যখন শুরু হয় কালবৈশাখী সমেত শিলাবৃষ্টি ও বিদ্যুৎ চমকানো, তখন সে আতঙ্ক বাড়ে বহুগুণ। এদিন রাতে কর্মস্থল থেকে ঘরে ফিরতে অনেককেই কাক ভেজা হতে হয়।
এমনিতে রাজধানীতে দুর্ভোগের শেষ নেই। সেই সঙ্গে রাতভর টানাবৃষ্টি যখন সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তখন গোটা রাজধানীতে দুর্ভোগের মাত্রা যে বহুগুণ বেড়ে যাবে সে কথা হয়তো আর কাউকে বলতে হয় না। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অফিসগামী নগরবাসী, রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সবজিওয়ালা, হকার, বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল— দুর্ভোগ সবাইকেই এক কাতারে দাঁড় করায়। শুধু তাই নয়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়া মধ্যবিত্ত বা দামী গাড়িতে চলা উচ্চবিত্তও বাদ পড়েনি দুর্ভোগের করাতে কাটা পড়তে। রাজপথের জলজটে গাড়ি বন্ধ হওয়ায়, হাঁটুজলে নেমে তাদেরও গাড়ি ঠেলতে হয়েছে।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায়। এছাড়া পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ি, মানিকনগর, মুগদা, মান্ডা, বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, গোড়ান, সিপাইবাগ, মেরাদিয়া, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার, রমনা, খিলগাও, তালতলা, মিরপুর, পল্লবী, শ্যমলি, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, জিগাতলা, আগারগাঁওয়ের নিচু এলাকা ও গলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন- মিরপুর, পল্লবী, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, রাজারবাগ ও মগবাজার এলাকার মানুষেরা। চলমান মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান থাকা ও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হওয়ায় এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মিরপুর ৬ নম্বরের পপি সুলতানা বলছিলেন, বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করে বসেছিলাম, বৃষ্টিও থামে না, রিকশাও মেলে না। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি। ওদিকে স্কুলে বাচ্চার পরীক্ষা।
অসবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা থাকেন টিকাটুলির অভয় দাস লেনে। বাজারের জন্য গোপিবাগ বাজারে রওনা হয়ে ভিজে আবার বাসায় ফেরত এসেছেন তিনি। কারণ, জলজটে রিকশার আকাল।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে এ বছরের এপ্রিলে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে সমতলে মেঘ নেমে আসার ঘটনা ঘটলো ১৬ বছর পর। আবার এবারই প্রথম মার্চের শেষ চারদিনে সিলেট অঞ্চলে গড়ে ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তাদের ভাষায়, স্বাভাবিকের তুলনায় ২০১৭ সালের ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাসের বাকি সময়টা আর বৃষ্টি না হলেও স্বাভাবিকের তুলনায় এ মাসে ৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি থাকবে।
বাংলাদেশে এপ্রিলে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫,২৮৬ মিলিমিটার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এসএনএস