ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তফজ্জুল যুগের অবসান, নাকি পুনরাবৃত্তি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
তফজ্জুল যুগের অবসান, নাকি পুনরাবৃত্তি!

বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে: জন্মলগ্ন থেকেই প্রশাসক নির্ভর ছিল বিয়ানীবাজার পৌরসভা। জনপ্রতিনিধি ছাড়াই পেরিয়েছে দেড় যুগের বেশি সময়।

নির্বাচন হচ্ছে, হবে এমন আবহ কয়েকবার তৈরি হলেও আটকে গেছে মামলা জটিলতায়।

২০০১ সালে বিয়ানীবাজার ইউনিয়ন পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে এ জটিলতা তৈরি হয়।

নির্বাচন না হওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে মামলার কূটচাল। আর এজন্য সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পৌর প্রশাসক বনে যাওয়া তফজ্জুল হোসেন দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
 
আক্ষরিক অর্থে ১৬ বছর পৌর প্রশাসক হিসেবে কাটিয়েছেন তফজ্জুল হোসেন। ১৯৯৭ সালে বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন তিনি। তার মেয়াদান্তেই ২০০১ সালে পৌরসভায় উন্নীত হয় বিয়ানীবাজার। তৎকালীন সময়ে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হতেন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা।

নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মেয়াদ পূর্তির জন্য মামলা ঠুকে দিয়ে আদালতের নির্দেশে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পান তফজ্জুল। এরপর যখনই নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন, তখনই হয়েছে সীমানা নির্ধারণী মামলা। নির্বাচনবিহীন এভাবে কেটে গেছে ষোলটি বছর।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রশাসক যুগের অবসান ঘটছে, নাকি আবারও মসনদে বসছেন তফজ্জুল। পৌর এলাকায় এ বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন সংগ্রাম পরিষদ নেতা রফিক উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০০১ সালে পৌরসভা গঠন হলেও মূলত ১৯৯৭ সাল থেকেই ২১টি বছর স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে পার করেছি। এখনও পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ৭টি মামলা চলমান’।

এবার ভোটের মাধ্যমে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিব মনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, একাধারে পৌর প্রশাসক তফজ্জুল নিজের একটি মামলাসহ তৎকালীন অন্যান্য ইউপি সদস্যদের দিয়ে আরও ৬টি মামলা করান। তিনি নির্বাচিত হলে এসব মামলায় আরও ৩০ বছর কাটাবেন প্রশাসক হিসেবে, এমন ধারণা তার একার নয়, পৌর এলাকার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের।

এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে ২০১০ সালে বরখাস্ত হন তফজ্জুল। এরপর উচ্চ আদালতে ৯০৬ নং মামলা স্থিতাবস্থায় রেখে প্রশাসক হিসেবে তফজ্জুল বহাল থাকেন, বলেন তিনি।

যেভাবে আসে নির্বাচন: পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর প্রশাসক হয়ে মেয়াদ পূরণের জন্য তফজ্জুল উচ্চ আদালতে একটি মামলা (নং-২৩৭৫/০১) করেন। একইসঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান, বর্তমান কমিশনার মনির আলী নিজেদের বাড়ি পৌরসভায় আনার জন্য মামলা করেন। তাদের মতো ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের লোসাই মেম্বার ৬ নং ওয়ার্ড থেকে পৌর এলাকায় ঢোকার জন্য মামলা করেন। মোল্লাপুর ইউপি সাবেক মেম্বার আব্দুল মজিদ ৭ নং ওয়ার্ড থেকে ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্তির জন্য মামলা করেন। তফজ্জুলের মামলাসহ এখানে ৭টি মামলা করা হয় আদালতে। যেগুলো এখনও স্থিমিত আছে।  

২৩৭৫ নং মামলাটি ২০০৫ সালে ডিসমিস হলে আপিল করে সুপ্রিম কোর্ট ১৪২৫ নাম্বারে নথিভুক্ত হয়। এ মামলা স্থিত রেখে প্রশাসক বহাল থাকেন তফজ্জুল।

অনেকটা নীরবে প্রচারণা চালিয়ে আসা বর্তমান পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন রোববার শেষ প্রচারণায় মুখ খোলেন। পৌর সদরে শেষ জনসভায় তিনি বলেন, ১৭টি বছর প্রশাসক হিসেবে থাকাকালে ১৭ দিনও তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি একটি মহল।

এ ব্যাপারে জগ প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তফজ্জুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শুধু প্রশাসক হিসেবে মেয়াদ পূরণের জন্য মামলা করেছি। অন্য মামলাগুলো আমার করা নয়। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জনপ্রতিনিধির ওপর আল্লার ছায়া থাকে, যে যতো বদনাম করুক, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এনইউ/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।