ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ভীতি বাড়ছে নৌ-পথে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
ভীতি বাড়ছে নৌ-পথে নৌ-দুর্ঘটনা-ছবি-বাংলানিউজ

বরিশাল: একের পর এক দুর্ঘটনা ভীতি বাড়াচ্ছে বরিশাল-ঢাকা ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে। আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ চালক থাকলেও নদীপথের পরিবর্তন, ডুবোচর ও ভাঙা-গড়ার খেলাকেই এখন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।

গত ১ বছরে বরিশালের বিভিন্ন নদীতে প্রায় দুই ডজন দ‍ুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধশত মানুষের।

২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ঐশী-২ ট্রলার ডুবে ২৬ জনের প্রাণহানি ও ১০ জন আহত হন। ওইদিন বিকেলেই একই নদীতে এমভি মর্নিংসান লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে একজন মারা যান।  
একই বছরের ৪ জুলাই ভোরে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়ায় এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের সঙ্গে স্টিমার পিএস মাহসুদের সংঘর্ষে ৫ যাত্রী নিহত ও ১০ জন আহত হন।

এ দু’টি বড় হতাহতের ঘটনা ছাড়া অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন যাত্রীরা এমন ঘটনাও রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ হিজলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের ধাক্কায় ৬’শ যাত্রী নিয়ে সুন্দরবন-৯ লঞ্চের তলা ফেটে যায়। ৩১ অক্টোবর উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীতে ২ শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি যুবরাজ ও বালুর কার্গোর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২২ এপ্রিল কীর্তনখোলায় ৪’শ যাত্রীসহ গ্রিনলাইন-২ এর সঙ্গে কয়লাবাহী কার্গো মাসুদ-মামুন-১ এর সংঘর্ষে কার্গোটি ডুবে যায়। আর প্রতিটিতেই অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন এসব লঞ্চের যাত্রী ও আরোহীরা।

পাশাপাশি নৌকা বা ট্রলার ডুবে নিঁখোজ ও মৃতের সংখ্যাও কম নয়। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় নৌকা ডুবে নানা-নাতির মৃত্যু হয়। ৫ জুলাই মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে এক শিশু নিখোঁজ হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর হিজলার মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়। ৫ অক্টোবর মুলাদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে এক জেলে মারা যান। ১২ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নিখোঁজ হন। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি হিজলার দুর্গাপুর ঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় ব্যবসায়ী ও ১১ মার্চ বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নৌকাডুবে এক নারীর মৃত্যু হয়।

আবার ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঘন কুয়াশায় বরিশালের চরকাউয়ায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে স্টিমার পিএস মাহসুদ আটকে পড়ে, ১৩ মার্চ বাকেরগঞ্জে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি বাগেরহাট-২ লঞ্চটি আটকা পড়ে। এছাড়া ১ আগস্ট প্রায় হাজার যাত্রী নিয়ে ডুবোচরে আটকে যায় এমভি পারাবত-১১। একই বছরে যাত্রী নিয়ে ডুবোচরে আটকা পড়ে গ্রিন লাইনও।
এদিকে এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করে রাখা তেলভর্তি এমভি এ্যাংকর এজ নামের একটি ট্যাংকারের ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণে অন্তত ১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হন।  
মধ্যরাতে প্রতিযোগিতার নামে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ বা ধাক্কা লাগছে প্রায়ই, যা যাত্রীদের হরহামেশাই ভীতিগ্রস্ত করছে।

লঞ্চ মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, এখন মাস্টার চালকরা অনেক অভিজ্ঞ। তবে অবৈধ নৌ-যান রোধ ও চরসহ নদী পথের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ।

তবে নৌ দুর্ঘটনা বিগত সময়ের চেয়ে কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা। পাশাপাশি নৌ-পথে অবৈধ ট্রলার, বাল্কহেড চলাচলও নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, যে সব অনাকাঙ্খিত দ‍ুর্ঘটনা ঘটছে তার তদন্ত ও সুপারিশ কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে ভৌগলিক কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে কি না তাও দেখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এমএস/আরআর/এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।