র্যাবের তদন্তে এমন একজনের নাম আসে যিনি হলি আর্টিজান হামলার কয়েকবছর আগ থেকেই নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছেন।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে তামিম দ্বারীকে ধরতে তৎপরতা শুরু করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব-৪। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে দুই সহযোগিসহ তাকে আটক করে র্যাব-৪ এর সদস্যরা। আটক অন্য দুই সদস্যরা হলেন- কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন, প্রায় এক কেজি প্লাস্টিক ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির সরঞ্জামাদী, ৩টি চাকু, একটি চাপাতি, একটি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মূদ্রা উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটকরা প্রাথমিকভাবে তামিম-সারোয়ার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী বেশকিছু অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেকেই মারা যায়। নেতৃত্বশূন্য দলকে পুনরায় সংগঠিত করতে চেষ্টা করছিলো তামিম দ্বারী। সে যেকোনো সময় রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সব স্থানে নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সাভারে ঝিটকা-গাবতলীগামী ভিলেজ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
তিনি জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর র্যাবের অভিযানে পালানোর সময় নিহত হন সারোয়ার। পরে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। সেসব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত তামিম-সারোয়ার গ্রুপের ২৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেসব নথিপত্রেই তামিম চৌধুরীর বিশ্বস্ত তামিম দ্বারীর নাম পাওয়া যায়। সে জঙ্গিবাদে আগ্রহী যুবকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ তামিম চৌধুরীকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতার পরামর্শ দিতো।
তামিম দ্বারী মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই জাহাজে কর্মরত আবু বক্করের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, তামিম দ্বারীর বিদেশ থেকে নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা ছিলো। এজন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জাহাজে তাদের লোক রিক্রুটের চেষ্টা করে সে। এ বিষয়ে নিহত তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়।
আটক মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি বাংলাদেশে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে এসে একই মনোভাবাপন্নদের সংস্পর্ষে এসে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে সে।
কামরুল হাসানের বাবা বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। ২০০৬ সালে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হন। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মাধ্যমে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে সে হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
পিএম/ওএইচ/বিএস