ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তামিম ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গিবাদে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
তামিম ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গিবাদে! আটক তিন জঙ্গির মাঝে তামিম দ্বারী/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ২০০৩ সালে কলেজে পড়া অবস্থায় ইসলাম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মণ্ডল। তারপর নাম পাল্টে হয়ে যান তামিম দ্বারী। এরপর প্রথমে তাবলীগ জামায়াত পরে জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিবাদে।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সাভার থেকে তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফাসহ তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্মান্তরিত হয়ে পর্যায়ক্রমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেন তামিম।

র‌্যাব জানায়, তামিম নামধারী এ ব্যক্তি নব্য জেএমবির প্রাক্তন নেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশে আনার চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য তিনি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জাহাজে লোকবল রিক্রুট করার চেষ্টা করছিলেন। নেতৃত্বশূন্য নব্য জেএমবিকে আবার সক্রিয় করে নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো তার।

তাবলীগ জামায়াতে তামিম দ্বারীর সঙ্গে তানভীর কবির নামের এক যুবকের পরিচয় হয়। তখন তানভির কবিরের বাবা তামিম দ্বারীকে পালক সন্তান হিসেবে নেন।

২০০৫ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তামিম। সেখানে সাত থেকে আট মাস পড়ালেখা করে ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের মেরিন একামেডিতে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষে ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অধীনে চাকরি পান। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলার কলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তার একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্করের সঙ্গে পরিচয় হয়।

২০১৩ সালে ‘বাংলার কলি’ যখন পাকিস্তান যাচ্ছিলো তৎকালীন বিশ্বব্যাপী মুসলামনদের ওপর বিভিন্নধরণের নির্যানতন-নিপীড়নের বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তামিমের আলোচনা হয়। এ প্রেক্ষিতে এসবের একমাত্র সমাধান হিসেবে জিহাদের কথা আলোচনা হয়।

পরবর্তীতে ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবুর মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরে-১১ নম্বরের একটি জায়গায় নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়  হয় তামিম দ্বারীর। জিহাদের জন্য তামিম চৌধুরী বিদেশে থেকে এসেছে বলে সে তামিম দ্বারীকে অনুপ্রাণিত করে। এ কথায় তামিম জিহাদের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেন।

২০১৪ সালে জানুয়ারিতে তামিম চৌধুরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় যান। সেখানে তাকে তামিম দ্বারী বাংলার দূত জাহাজ ঘুরিয়ে দেখান। সে সময় তারা জাহাজের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রসদ আনার ব্যাপারে পরিবহণের জন্য বিশ্বস্থ লোকের প্রয়োজন অনুভব করেন। এ কারণে তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বিশ্বস্থ যুবকদের জাহাজে রিক্রুট করার পরিকল্পনাও করেন।

২০১৫ সালে জুলাইয়ে ইনস্টিটিউব অব মেরিন টেকনোলজিতে (আইএমটি) ভর্তি হন তামিম। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা ও তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর তামিম দ্বারী নিজের জঙ্গিসম্পৃক্ততা গোপন করতে আইএমটিতে পড়ালেখা শেষ না করে জাহাজে যোগ দেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেন।

র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, তামিম দ্বারী ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর ২০১৬ সালে আবার চাকরিতে যোগ দেন। মাঝখানের সময়টাতে হলি আর্টিজান হামলাসহ কয়েকটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় তামিম দ্বারীর সম্পৃক্ততা আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
পিএম/ওএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।