মঙ্গলবার (২ মে) সকালে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ‘এসডিজি-১৬ ও সুশাসন, সরকার,গণমাধ্যম ও জনগণ’ শীর্ষক ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
তাতে অংশ নেওয়া সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা সাংবাদিকদের বিভাজন ও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিরও সমালোচনা করেন।
এ সময় সংবাদমাধ্যমগুলো বেতন ভাতা প্রদানসহ নিজেরা নিয়ম মানে কিনা এজন্য ইন হাউজ গবেষণা হওয়ার দাবিও উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্যে।
সংলাপে নির্ভীক ও মুক্ত সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমের অগ্রসরতার সঙ্গে চাপ বৃদ্ধি, সাংবাদিক নেতাদের অপেশাদারিত্বসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়।
বাইরের পেশাদার সংগঠনগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বাইরের পেশাদার সংগঠনগুলো একটা মান ঠিক করে, নিজেদের কেউ নিয়ম না মানলে তিরষ্কার করে।
তিনি বলেন, পিউর প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন গড়ে তুলতে হবে। দল ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে সেবা করতে পারবেন না।
সাংবাদিকতাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশাদার সংগঠনের সমালোচনা করে শামসুল হুদা বলেন, আমাদের এখানে পোস্টিং, বদলি, রাজনীতি করার জন্য পেশাদার সংগঠন করা হয়।
সুশাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। সরকার থাকবে,সরকার কার্যকর করার মতো কাঠামো ঠিক করা দরকার। সবার চেষ্টা করার উচিত কিভাবে সরকার ব্যবস্থাকে আরো ভালো করা যায়।
বক্তব্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন সাবেক এ সিইসি।
১৫ শতাংশ ভ্যাটের সিদ্ধান্তের যুক্তি নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিদ্যমান হারের ভ্যাট উত্তোলন করতে পারছে না। ভ্যাট বাড়িয়ে সৎ, নিরীহ ভোক্তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হবে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাংবাদিক এবং গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, সরকার পলিসি বানাতে আগ্রহী, প্রয়োগে নয়।
অনলাইনের গুরুত্ব তুলে ধরে আফসান চৌধুরী বলেন, অনলাইনে কোটি কোটি পাঠক। এটাকে ফোকাস করতে হবে। অনলাইনই হবে আগামী।
সাংবাদিক মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, গণমাধ্যম নিজেরা নিজেদের বিষয়ে যদি সোচ্চার না হয় তবে সরকার সোচ্চার হবে না।
প্রেস কাউন্সিল কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাংবাদিক নেতাদের রাজনৈতিক বিভাজনের সমালোচনা করে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, দিনে দিনে এটি প্রকট হচ্ছে। সাংবাদিকতার চেয়ে রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে বেশি ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় সাংবাদিকদের।
দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, দূষিত রাজনীতিকে ক্যানসার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ রোগ সারানোর বড় কোনো উদ্যোগ নেই।
সাংবাদিকদের নিজেদের অনিয়মের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অন্য প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা নিয়ে রিপোর্ট করে, নিজেদের বিষয়ে করে না। অন্যের দুর্নীতি নিয়ে টকশোতে গলা ফাটায়, কিন্তু নিজেদের বিষয়ে কথা বলে না।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম এগিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে চাপও বাড়ছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্য চাপ ক্রমাগত গণমাধ্যমের ওপর বাড়ছে।
স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সরকারের বলে মত দেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আয়নায় নিজেদের চেহারার দিকেও তাকাতে হবে। নিজের ঘরে সুশাসন আছে কিনা।
সাংবাদিক জ ই মামুন বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যে নিজের কাজটুকু পেশাদারিত্বের সঙ্গে করলে এগিয়ে যাওয়া যায়, ভালো সাংবাদিকতা করা যায়।
চীন, আমেরিকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের বির্তক বিভিন্ন দেশে আছে, থাকবে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। তাহলে ভালো কিছু একদিন আসবেই।
সাংবাদিকতার নানান সম্ভাবনা ও সুযোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) রিজওয়ান-উল-আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
এমইউএম/জেডএস