ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীতে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
রাজধানীতে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ ছবি: প্রতীকী

ঢাকা:রাজধানীতে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েই চলেছে। রাজধানীর দুটি সিটি কর্পোরেশেনে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিগত ছয় বছরে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ৩৬ হাজার ৩৭১টি । সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, আধুনিক অতি-স্বাধীনচেতা মানসিকতা, পারস্পরিক আস্থা ও সহনশীলতার অভাব এবং একের প্রতি  অপরের দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্যই বেড়ে যাচ্ছে এই বিবাহবিচ্ছেদ!

পরিসংখ্যান বলছে, গত ৬ বছরে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের পাঁচটি অঞ্চলে মোট ২০ হাজার ৫৮৪টি তালাকের নোটিশ পড়ে। এসবের মধ্যে কার্যকর হয়েছে ১৬ হাজার ৬২১টি।

নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৪৬৫টি। নোটিশ চলমান ৩ হাজার ৫১৮ টি।

অন্যদিকে আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের পাঁচটি অঞ্চলে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭টি। নোটিশ কার্যকর হয়েছে ১৪ হাজার ২৩৪টি। প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৮টি ।

বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত আবেগের পাশাপাশি অধিক সুখের আশায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের পাঁচটি অঞ্চলের একটি অঞ্চল-৪ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু নাসের বাংলানিউজকে বলেন, আমার এই অঞ্চলে (অঞ্চল-৪) বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। যেখানে ২০০৬ সালে প্রাপ্ত নোটিশের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৩টি, সেখানে ২০০৭ সালে সংখ্যাটা ২৫০টি। আর গত বছর (২০১৬ সালে) ছিল ৩৩৩ টি। যার মধ্যে স্বামী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৯১ টি আর স্ত্রী কর্তৃক ২৪২ টি।

তবে শুধু দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের অঞ্চল-৪ তেই নয়, পুরো পরিসংখ্যানজুড়েই স্ত্রী কর্তৃক তালাকের হারের সংখাই বেশি। দুই সিটিতে নোটিশপড়া ৩৬ হাজার ৩৭১টি মধ্যে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে দেওয়া হয় ২৪ হাজার ৮০৩ আর স্বামীর তরফ থেকে স্ত্রীকে দেওয়া হয় ১২ হাজার ১৮টি তালাকের নোটিশ।

সদ্য বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া, মোহাম্মাদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের ২ নম্বর গলির আকলিমা খাতুন (১৯) বাংলানিউজকে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পেছনের কারণ হিসেবে বলেন, বিয়ের আগে তাঁর স্বামী বলেছিলেন তার কাজ করতে হবে না। কিন্তু বিয়ের পরে তাকে মানুষের বাসায় কাজ করার জন্য মারধর করতেন স্বামী। আকলিমা এই অল্প বয়সে ছেলেদের মেসে কাজ করতে চাননি। শেষ পর্যায়ে স্বামীকে মানাতে না পেরে নিজেই স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠান।

মেয়েদের তালাক দেবার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী আনোয়ার হোসেন বলেন, পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় ছেলেরা তাদের চাহিদা বা প্রয়োজন বাহির থেকে মিটিয়ে নিতে পারে। সেটা খেলাধুলা বা আড্ডা অথবা ভিন্ন কিছুতে। যেখানে মেয়েরা বারেবারেই অবহেলিত। স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি এই জায়গাটায় অবহেলা করে থাকে। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটুকু মেয়েদের কাছে থেকেই আসে।   

পারিবারিক মূল্যবোধের জাগরণের পাশাপাশি, নারী-পুরুষের মধ্যে সমতাবিধান করতে পারলেই বিবাহবিচ্ছেদ কমবে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।