চীনের কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের দর প্রস্তাবে রাজি না হয়ে এ প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে যাচ্ছে।
গত বছরের শেষের দিকে ‘চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানির সঙ্গে ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তি করে রাখা হয়েছিলো।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। বুধবার (০৩ মে) দুপুরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনও কিছুই ঠিক হয়নি। আর হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং চলে গেছে, সেটিও ঠিক নয়। তবে তারা যদি কাজ না করে, তাহলে পরবর্তীতে কোন দেশের কোম্পানি এটি করবে, সেটি ঠিক করবে অথনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)’।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৭ সালের নির্মাণ ব্যয় হিসেব করে দর প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ সরকার ২০১৪-১৫ সালের নির্মাণ ব্যয় হিসেব করে প্রস্তাব দিয়েছে।
চীনা কোম্পানিটির সূত্র বলছে, ঢাকা-সিলেট চারলেনে উন্নীত করতে তারা ‘কন্টেনজেন্সি অ্যালাউন্স’, ‘ভ্যাট’ ও ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট’ ছাড়া ১২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা চেয়েছে। এর সঙ্গে ২০ শতাংশ কন্টেনজেন্সি অ্যালাউন্স, ৩০ শতাংশ ভ্যাট ও ২০ শতাংশ অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট যোগ হবে।
কিন্তু কন্টেনজেন্সি অ্যালাউন্স, ভ্যাট ও অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যয়সহ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ১৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। যা চীনা কোম্পানির মূল দামের এক হাজার ৪০ কোটি টাকা বেশি।
এতে হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছে। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কথা জানিয়ে এরই মধ্যে তারা চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
তবে তারা শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাবও করেছে যে, সরকারের দাম প্রস্তাবের সঙ্গে আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিলেই রাজি হবে।
হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, দীঘদিন ধরে এ প্রকল্পের কাজ পেতে সময় ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে একাধিক চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার অনাগ্রহ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সময় ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় তারা এ প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাচ্ছে।
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিদ ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘আমলান্ত্রিক জটিল অবস্থার কারণে চারলেন প্রকল্পটির নেগোসিয়েশন পর্ব শেষ করতে বেশ দেরি করা হয়েছে। এরপরও চীনের সঙ্গে দর কষাকষি ঠিক করতে পারেনি মন্ত্রণালয় এবং তার সংশ্লিষ্ট বিভাগ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। অন্যদিকে চীনারা সরকারের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ‘উইথড্র’ করে নিতে যাচ্ছে।
‘এখন এটি শুরু করতে আরও ৫ বছর দেরি হবে। তখন এর নির্মাণ মূল্য দেড়গুণ বাড়বে। এটি সরকারের আমলারা বুঝছেন না’- বলেন মোমেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে সিলেট তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টায় যাতায়াত করা যেতো। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু থেকে সিলেট শহর পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার দুইলেন সড়ককে চারলেনে উন্নীত করাই ছিলো এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পে ছোট আকারের ৬০টি সেতু, চারটি ফ্লাইওভার ও ২৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কথা। সড়কের দুই পাশে থাকবে আলাদা সার্ভিস রোড।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
এসএ/এএসআর