কাজী সাহাবউদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা ও তার বান্ধবী সীমা আক্তার। বৃহস্পতিবার সকালে তেঁতুলিয়া বাজারেই কথা হয় বাংলানিউজের সঙ্গে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরীই সাইকেল চালায়। এই সাইকেলের কারণে যেমন তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি পোশাকেও রয়েছে কম বাধ্যবাধকতা।
১৫ বছর বয়সী সীমা ১২ বছর বয়সে সাইকেল চালনা শেখে বড় বোন শ্যামলীর কাছ থেকে। তবে এসএসসি পাশ করা শ্যামলী এখন আর সাইকেল চালায় না। সীমা বলে, এসএসসি'র পর আমিও আর সাইকেল চালাবো না। বড় হলে চালানো যায় না।
খাদিজার বাবা কাঁচামালের ব্যবসা করেন। বাবাই এই সাইকেলটি কিনে দিয়েছেন, আর শিখেছে নিজেই। এখন জরুরি সব যাতায়াতে কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না। বলে, চলাচলের স্বাধীনতা দিয়েছে সাইকেল। আগে একা বের হওয়া যেতো না। বের হলেও অটো বা ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। গত তিন বছর ধরে সাইকেল চালালেও কোনো দিন দুর্ঘটনার শিকার হয়নি বলে জানায় দুই বান্ধবী। বলে, আমরা তো ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল চালাই না। বেটারা স্পিডে চালাইতে যাইয়া দুর্ঘটনার শিকার হয়।
স্কুলটির নবম শ্রেণিতে ১২২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮০ জনের বেশি শিক্ষার্থী সাইকেল চালায়। একটি সাইকেলের দাম ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা হওয়ায় অনেক পরিবারের পক্ষে মেয়েকে সাইকেল কিনে দেয়া সম্ভব হয় না।
গত বুধবার দুপুরে সীমান্তবর্তী সর্দারপাড়া গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলো ১৩ বছর বয়সী জয়নব আখতার। পাগলিডাঙ্গি মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে বসেছে তার ফুফু জুঁই আখতার।
জুঁইও একই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। এই দুই সাইকেল কিশোরী বাংলানিউজকে বলে, এই অঞ্চলে মেয়েদের সাইকেল চালানো খুব স্বাভাবিক। এখানে বোরখা পরতেই হবে, এমন চাপও পরিবারের পক্ষ থেকে কম থাকে। তবে দশম শ্রেণিতে ওঠার কারণে জুঁই এখন আর সাইকেল চালায় না।
জয়নব জানায়, তার ক্লাসে ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ জনই মেয়ে। এদের মধ্যে ১১ জন ছাত্রী সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে।
দশম শ্রেণি বা এসএসসি পরীক্ষার পর আর সাইকেল না চালানোর কারণ হিসেবে বিয়ে কিনা- জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করে।
তবে অভিভাবক মোহাম্মদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ বছর হয়ে গেলে মেয়েদের বিয়ের চিন্তা করেন বাবা-মা। তখন বাজারে বা কলেজে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াটা ঠিক সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না অনেকেই। তবে কিশোরী বয়সে মেয়েদের সাইকেল চালনা এখানে সহজভাবেই নেন সবাই।
পঞ্চগড় জেলায় কিশোরীদের সাইকেল চালনা, তাদের স্বাধীনতার প্রকাশ বলে মনে করেন জেলা নারী উন্নয়ন পরিষদ সভাপতি সুলতানা রাজিয়া।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, একজন মেয়ে স্বাভাবিকভাবে ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে চলাচলের স্বাধীনতা পেলে নিজেকে অনেক বড় ফ্রেমে চিন্তা করতে পারেন। নিজের ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর সাহস পান। এই অঞ্চলে এখন মেয়েদের স্কুলে যাওয়া যেমন বেড়েছে, তেমনি বাল্য বিয়েও কমে গেছে। নারীদের ওপর কোন নির্যাতনের প্রতিবাদ নারীরাই করতে পারছে। সাইকেল তার অনুপ্রেরণা যোগায়, সাহসিকতা শেখায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
এমএন/জেডএম