ঢাকা, বুধবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্ত গ্রামের কান্না!

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৭
সীমান্ত গ্রামের কান্না! সীমান্ত গ্রামের কান্না!

তেঁতুলিয়া থেকে: জোসনার বড় বোন শেফালির বিয়ে হয়েছে ২০ বছর আগে। তখন ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে ছিলনা কাঁটাতার। শেফালি হয়ে পড়েন ভারতের বাসিন্দা। ইচ্ছে হলেও আর বড় বোনের দেখা পাওয়া যায় না। ঈদ বা অন্য উৎসবের সময় কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন বোন, তখনই যা দেখা পাওয়া যায়।

এছাড়াও আবাদের সময় দুলাভাই ও ভাসুরেরা আসেন। তখন বর্ডারে গেলে দেখা হয়।

তবে জোসনার নিজের কোনদিন সীমান্তের ওপারে যাওয়া হয়নি। বোনের ছেলে-মেয়েদের দেখা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকবার।

দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। যার ২৮৮ কিলোমিটার ধরে ভারতের সীমান্ত। এই জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। ইতিহাসে বারবার এ সীমান্তে দাগ কেটেছে। পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, ভাইয়ের কাছ থেকে ভাইকে আলাদা করে দিয়েছে। সন্তানের দেখা চাইলেও আর পায় না মা!

জোসনা বলেন, ১৯৯৬ সালে বড় বোনের বিয়ে হয়। তখন আমি ছোট ছিলাম। এরপর ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে এ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। তখন কেউ সীমান্তের দিকে যেতেও ভয় পায়। দুই দিকেই সীমান্তবাহিনীর টহল বাড়তে থাকে। আমার ভাইয়ের পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি ভারত গেলে বোন, বোনের ছেলেদের ছবি মোবাইলে তুলে আনেন। সেগুলোই দেখি।

এখানে সীমান্তে মানুষের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। তাই দুশো মিটার পরেও কেউ ঘর তুলতে ভয় পান। যতোটা ভেতরে পারা যায় ঘর তোলেন।

এখন পর্যন্ত কোনদিন এই সীমান্তে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। তবে গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকেন। তাইতো এ গ্রামে নেই কোনো ইটের দালান। গ্রামবাসী জানায়, এখানে তারা অস্থায়ী বাড়ি উঠান। যা টিন, বেড়া বা ছন দিয়ে তৈরি। প্রয়োজনে যেন সরিয়ে নেয়া যায়।

সীমান্ত গ্রামের কান্না!সীমান্তের এ গ্রামের নাম সর্দারপাড়া। বর্তমানে গ্রামের দুই ভাগ দুই দেশে। ভারতের দার্জিলিং জেলার অংশে গ্রামের নামও সর্দারপাড়া। কেউ মারা গেলে, ভিন্ন পাড়ের স্বজনেরা বর্ডারে নাম লিখিয়ে আসতে পারেন। তবে একদিনের অনুমতি দেয়া হয় এক্ষেত্রে। সন্ধ্যার মধ্যে আবার ফিরে যেতে হয়। ধান কাটার মৌসুমেও সীমান্তের ওপার থেকে স্বজনেরা নাম লিখিয়ে আসতে পারেন।

সর্দারপাড়ার স্কুল শিক্ষক লতিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার চাচা এখন ভারতীয়। দেশভাগে তাদের জায়গা জমি দুই দেশে পড়ে যায়। তখনো একসঙ্গেই ছিলেন। তবে সীমান্তে বেড়া দেয়ার সময় বাবা তার চাচাকে ভারত অংশে থেকে যেতে বলেন। এরপর আর চাচা এবং ভাইদের দেখা সহজে পাননা লতিফুর।

লতিফুর আর জোসনার মতো এ গ্রামে অসংখ্য পরিবার রয়েছে, যাদের স্বজনদের বিচ্ছিন্ন করেছে সীমান্তের কাঁটাতার।

এ গ্রামের পাশেই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। প্রতিদিন সকালে দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্যে যৌথ কুচকাওয়াজে অংশ নেন। দেখতে আসেন স্থানীয়রাও।

এ গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। এছাড়াও পাথর উত্তোলনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭
এমএন/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।