‘বাস্তবের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বহু কাঙ্ক্ষিত ‘স্বপ্নের কক্সবাজার’।
আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে জানাতে এসব কথা বললেন সাদ আলাউল হক।
আলাউল তখনো ব্যস্ত। কক্সবাজার বিমানবন্দর কাল (শনিবার ০৬ মে) থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে। তার কাজের চাপ বাড়ছে। হেড অফিস থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সবাই উন্মুখ কক্সবাজারের অনাগত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর তাড়নায়।
কক্সবাজারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিশাল প্যাকেজ নিয়ে আসছেন শনিবার। পুরো কক্সবাজারজুড়ে এ নিয়ে শিহরণ। চাঞ্চল্য সর্বক্ষেত্রে। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার হয়েছে।
হোটেলগুলোতে সরকারের নানা সংস্থার লোকজনের ভিড়। পর্যটন মৌসুম নয়, তবুও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জমজমাট কক্সবাজার। শনিবার দুই লাখ মানুষের সমাবেশ করতে তৎপর আওয়ামী লীগ। সৈকত সংলগ্ন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এজন্য সেজেছে বর্ণিল সাজে।
যতোবার কক্সবাজারে এসেছি, মাঝরাতে সৈকতে যাওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। হোটেল ম্যানেজার বললেন, ‘যেতে পারেন, স্যার। কোনো অসুবিধা নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। চুরি-ছিনতাই আজকাল হয় না’।
বিচঘেঁষা হোটেল থেকে কয়েক পা এগোলেই নিশুতি রাতের সৈকত। চারদিকে স্তব্ধ সমুদ্রের মৌনতা। বাতাসে ঝাউগাছের পাতাদের মৃদু স্পন্দন। আদি-অন্তহীন জমাট অন্ধকার বুকে নিয়ে সাগরের কালো চাদর। সেখানে মাঝে মাঝে মিটমিট করে জ্বলছে ফসফরাসের দ্যুতিময় আলো।
কক্সবাজারের ভবিষ্যতের ললাটে যেন রূপালি সৌভাগ্য রেখার নির্মাণ চলছে।
কয়েকজন প্রহরী ছাড়া বিশেষ কাউকে দেখা গেল না রাতের সমুদ্র সৈকতে।
ভোরের আগেই সে দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেল। স্বাস্থ্য উদ্ধারে মনোযোগী মানুষের কোলাহল বাড়ল সূর্য ওঠার আগেই। নারী, পুরুষ, যুবক, বৃদ্ধ, শিশু, কিশোরসহ ধীরে ধীরে মানবমেলায় মুখরিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। নতুন সকালের চিরায়ত প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনে আসা মানুষজন জীবনকে ইতিবাচকভাবে উপভোগের প্রত্যয়ে উজ্জ্বল হলেন।
সমুদ্র ভ্রমণের আড্ডা-বিনোদনের মধ্যেও প্রাধান্য পেল প্রধানমন্ত্রীর আগমন আর কক্সবাজার উন্নয়ন প্যাকেজ প্রসঙ্গ।
‘কক্সবাজারের সঠিক উন্নয়ন সম্পন্ন করা হলে এখানে আরেকটি সিঙ্গাপুর হবে’- বললেন সদ্য জাপান প্রত্যাগত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আক্কাস আহমদ।
পূর্ব এশিয়ার প্রায়-সবগুলো দেশই চষে বেড়িয়েছেন তিনি। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি মনে করেন, ‘বিশ্বায়ন ও আঞ্চলিক সংযোগ প্রচেষ্টায় কক্সবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে এই শহর। কক্সবাজারের উন্নয়ন সমগ্র বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে নেবে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ হোসাইন বিশ্বাস করেন, ‘সামনের দিনগুলোতে কক্সবাজারের দিগন্ত প্রসারিত হবে। মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে কক্সবাজারের পরিধি টেকনাফ পর্যন্ত বাড়বে। পর্যটন, ফুড, হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিজ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে’।
‘বিস্তৃত উন্নয়ন এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে’ বলেও আস্থাশীল তিনি।
তবে আশঙ্কার কথাও শোনা গেল। অধ্যাপক একেএম নূরুল বশর ভূঁইয়া সুজন উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা হলেও কক্সবাজার-চট্টগ্রামের সঙ্গে কর্মসূত্রে জড়িত। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতীয় উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সব কিছুই নষ্ট হয়ে যেতে পারে আইন-শৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না হলে। বিশেষত টেকনাফ, উখিয়ায় রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থানকে অপব্যবহার করে ইয়াবা, মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালানের যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে চিহ্নিত গডফাদাররা- সেটিই এ অঞ্চলের অগ্রগতির অন্তরায়। এ অপশক্তি সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে এবং যুব সমাজকে বিনষ্ট করছে’।
রোহিঙ্গা ও অন্য ইস্যুগুলোর সমাধানের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামগ্রিক উন্নয়ন প্যাকেজ উন্নয়নমুখী স্থানীয় নেতৃত্বের মাধ্যমেই সফল হতে পারবে। মাদকচক্র ও মাফিয়ারা সেটা পারবে না’।
ততোক্ষণে সৈকতে সকালের তাজা রোদ ঝলমল করে উঠেছে। আশা ও শঙ্কার কিছু মেঘ ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রের গভীরে।
সমগ্র কক্সবাজারবাসীর মতো পুরো বাংলাদেশের মানুষ কামনা করছেন, উন্নয়নের পথযাত্রায় সকল আশঙ্কার চির অবসান। প্রত্যাশা করছেন, একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের দ্রুতলয়ের পৃথিবীতে যোগ্যতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে কক্সবাজার হবে উন্নয়নের দিক-নিদের্শক বাতিঘর।
** প্রস্তুত মেরিন ড্রাইভ সড়ক, আসছেন প্রধানমন্ত্রী
** দুই লাখ লোকের সমাগম হবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়
** উন্নয়নের মহাযজ্ঞ নিয়ে কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭
এএসআর